নিউজরাজ্য

স্বাস্থ‍্যসাথী কার্ড থাকলেও হবে না চিকিৎসা! রোগীকে ফেরাল কলকাতার নামী হাসপাতাল

Advertisement
Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন রাজ্যের প্রায় ১০ কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় আসবেন, মিলবে বিনামূল্যে চিকিৎসা সরকারি-বেসরকারি উভয় হাসপাতালেই। তাই দুয়ারে সরকার কর্মসূচীতে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের চাহিদা তুঙ্গে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন দৃশ্য।

স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও রোগী ফিরিয়ে দিল কোলকাতার নামী বেসরকারি হাসপাতাল। অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে জরুরি বিভাগে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে চিকিৎসা হয় না। স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড নিয়ে কলকাতার নামী বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন ভাঙড়ের একটি পরিবার। সেখানে তাদের শুনতে হয়েছে, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে সুবিধা মেলে শুধু বহির্বিভাগে। অন্যদিকে চিকিৎসকেরা বলছেন, হৃদ‌্‌যন্ত্রের অবস্থা ভাল নয়, প্রয়োজন জরুরি চিকিৎসার। তবে ডাক্তারের পরামর্শমতো পরীক্ষা করাতে হবে বাইরে থেকে, ফি, পরীক্ষার খরচ কোনও কিছুতেই স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের সুবিধা মিলবে না। তাই বাধ্য হয়েই বিডিও-র কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভাঙড়ের শাকিলা বিবির পরিবার।

ভাঙড় ২ ব্লকের পোলেরহাট ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের মাছিভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা শাকিলা বিবির ছেলে রবিউল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা অসহায় গরিব মানুষ, কী ভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে রোগীর চিকিৎসা করাব। কার্ড থাকা সত্ত্বেও মায়ের চিকিৎসা করাতে পারছি না। বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছি।’’ বিডিও ভাঙড় ২ কার্তিক চন্দ্র রায় বলেন, ‘‘এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সব কিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সেইমতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

গত ১৯ ডিসেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হ‌ওয়ায় কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শাকিলা বিবিকে নিয়ে যায় তাঁর পরিবার। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, রোগীর অবস্থা ভাল নয়, এই মুহূর্তে সেখানে বড় হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ নেই। এর পরেই সল্টলেকের আমরি-তে নিয়ে যাওয়া হয় শাকিলাকে। অভিযোগ, সেখানে তাঁদের শুনতে হয় চিকিৎসার খরচ, যা দৈনিক ৫০ হাজার টাকার আশেপাশে, তাতে মিলবে না স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা। রবিউলের দাবি, তিনি স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের হেল্পলাইনে বারংবার ফোন করলেও সাড়া পাননি। পরে মাকে এসএসকেএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে, শয্যা না থাকায় প্রাথমিক চিকিৎসা করার পর ওষুধ দিয়ে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। আবারও স্বাস্থ্যসাথীর হেল্পলাইন নম্বরে চেষ্টা করে একই ফল। তার পর রবিউল পুলিশের দ্বারস্থ হলে তাদের পরামর্শমতো বিডিওর কাছে অভিযোগ করেন।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সর্বাধিক ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া যাবে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে, যে কোনও সরকার অনুমোদিত সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোমে। তা হলে কেন ওই অনিয়ম? আমরির এগজিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট চৌধুরী মিলন মহাপাত্র বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে কী ধরণের পরিষেবা পাওয়া যাবে, তা নিয়ে আমাদের মিটিং চলছে। তবে এমন হওয়ার কথা নয়। এ বিষয়ে আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’’ স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে নির্দিষ্ট করা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার মূল্য নিয়ে আপত্তি তুলেছে বেসরকারি হাসপাতালগুলি, তাদের বক্তব্য, সঠিক মান বজায় রেখে এত কম মূল্যে পরিষেবা দেওয়া অসম্ভব। সরকারের সঙ্গে চলছে আলোচনা। কিন্তু এখন প্রশ্ন, রবিউলদের কি এভাবেই হয়রান হতে হবে সমাধান বেরিয়ে না আসা পর্যন্ত!

Related Articles