আর তো মাত্র কটা দিন। তারপরেই শুরু হতে চলেছে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব অর্থাৎ দুর্গাপুজো। চার দিনের অনাবিল আনন্দ, প্যান্ডেল হপিং, খাওয়া-দাওয়া, হইহুল্লোড়- এর শেষে বিজয়া দশমীতে সবার মন ভারাক্রান্ত করে মা ফিরবেন কৈলাসে। কিন্তু দুর্গাপুজো শেষ হলেই বাঙালি যার আসার অপেক্ষায় দিন গুণতে থাকে তিনি হলেন মা কালী। কালো অঙ্গে তার ভুবন মোহিনী রূপটি দিয়ে বিজয়া দশমীর সব কষ্টকে তিনি দূর করে দেন এক নিমেষে। মায়ের নাম তো কালী। কিন্তু আপনি কি জানেন তার এই কালী নামের পেছনে আসল রহস্যটি ঠিক কি (Kali katha)?
পুরান অনুসারে জানা যায় দেবতাদের স্বর্গরাজ্য দখলের জন্য অসুরদের প্রয়াসের কোনো অন্ত ছিল না। সুযোগ পেলেই অসুররা দল বেঁধে স্বর্গরাজ্য আক্রমণ করত এবং তাদের আসুরিক শক্তি এবং ছলনা দিয়ে স্বর্গ থেকে দেবতাদের বিতাড়িত করে স্বর্গে তারা নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চাইতো। সেই সময় যুদ্ধ দেবতাদের সাহায্যের জন্য বিশেষ শক্তিশালী কোনো এক দেব বা দেবীর প্রয়োজন হতো।
এইরকম পরিস্থিতিতে দেবতারা চাইতেন তাদের পক্ষে এমন একজনের আবির্ভাব হোক যিনি তার সমস্ত শক্তি দিয়ে অশুভ কে বিনাশ করবেন। মনে করা হয় এই কাজটি অতি সহজ ভাবে করতে পেরেছিলেন মা কালী। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে তার এই বিজয়কেই উৎসর্গ করে কালী পূজার আয়োজন এবং কালী মায়ের আরাধনা করা হয়। মা কালী কে বন্দনা করার আসল কারণই হল অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শুভ শক্তির বিকাশ ঘটানো (Kali katha)।
পুরানে কঠিত আছে কাল-এর স্ত্রীলিঙ্গ কেই মূলত কালী নামে অভিহিত করা হয় (Kali katha)। পুরান অনুযায়ী কাল নামে ডাকা হয় ভগবান মহেশ্বরকে। শাস্ত্র অনুযায়ী বলা হয় যে কাল সকল জীবের বিনাশ ঘটায় সেই কালকেই নিজের শুভ শক্তির প্রভাবে প্রভাবিত করেন মা কালী! জগতের স্থিতি এবং উৎপত্তির মধ্যে লুকিয়ে আছে এই কাল শক্তি। যে মহাকাল জগতের সমস্ত কিছুকে বিনষ্ট করেন তিনি সেখান থেকেই আবার শুরু করেন নতুন প্রাণের জাগরণ। মহাপ্রলয় এর অন্তর্গত কালশক্তি মহাকালের মধ্যে লীন হয়ে যায়।
কালীর প্রথম আবির্ভাব অর্থাৎ তার জন্ম প্রসঙ্গে পুরানে বলা আছে অসুর প্রধান রক্তবীজ তার দীর্ঘ তপস্যার ফলে ব্রহ্মার কাছে বর পান তার শরীর থেকে ঝরে পড়া এক ফোঁটা রক্তবিন্দু থেকে আবার আর একজন অসুর জন্ম নেবে। যে সময় দেবতাদের স্বর্গরাজ্য থেকে বিতাড়িত করার উদ্দেশ্যে আসা অসুরের দল রক্তবীজ সহ প্রবল যুদ্ধে মেতেছিল সেই সময় রক্তবীজকে পরাস্ত করার মতো ক্ষমতা দেবতাদের ছিল না। নানা ভাবে রক্তবীজকে হারানোর চেষ্টা করলেও দেবতারা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হন। কারণ তার এক ফোঁটা রক্তবিন্দু থেকেই জন্ম নিচ্ছিল মহা শক্তিধর অসুররা। এই সময় রুষ্ট দেবী দুর্গা তার ভ্রু যুগলের মাঝখান থেকে প্রকাশ করে করেন এক ভয়ানক শক্তিশালী দেবীর, যার নাম হয় কালী (Kali katha)। তিনি তার রক্তবর্ণ জিহ্বা বের করে একের পর এক অসুরের বিনাশ ঘটাতে শুরু করেন। সেই সঙ্গে রক্তবীজকেও অস্ত্রে বিদ্ধ করে তার শরীর থেকে এক ফোঁটা রক্ত ও যাতে মাটিতে না পারে সেই ব্যবস্থা করেন। রক্তবীজকে একেবারে রক্তশূন্য করে তার দেহ একেবারে ছুড়ে ফেলে দেন এই দেবী। এই ভাবেই অসুর বিনাশিনী মা কালীর নাম ছড়িয়ে পড়ে মর্ত্যলোকে।