বিধানসভা নির্বাচনের আগে, ফের সরগরম রাজ্য রাজনৈতিক মহল। গত ১১ তারিখ নবান্ন অভিযানের সময় আক্রান্ত ডি ওয়াই এফ আই-এর এক নেতার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বর্তমানে উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। তবে, রাজনৈতিক দূরত্ব ভুলে এদিন মৃতের পরিবারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সন্তানহারা পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি। কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব মেনে নিলেও চাকরির জন্য শর্ত রাখলেন মৃত ডি ওয়াই এফ আই নেতা মইদুল ইসলাম মিদ্যার স্ত্রী আলেয়া বিবি। সঙ্গে এও জানালেন, ”দোষীদের কঠোর শাস্তি চাই।”
জানা গেছে, কোতলপুরের চোরকোলা গ্রামের বাসিন্দা ওই মইদুল ইসলাম মিদ্যা। পেশায় অটো-টোটো চালক তিনি। কোনও মতে দিনপাত করে অটো, টোটো কিনেছিলেন তিনি। সেই গাড়ি চালিয়েই পরিবারের পাঁচ সদস্যের পেট চালাতেন মিদ্যা। তাঁর পরিবারে রয়েছেন মা, স্ত্রী আলিয়া বিবি, দুই সন্তান ও তাঁর এক ভাগ্নি। একমাত্র তিনিই ছিলেন পরিবারের রোজগেরে সদস্য। তার এই দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুতে হারিয়ে পথে বসেছে গোটা পরিবার। সদ্য সন্তানহারা মা বলছেন, “একমাত্র সন্তানকে হারিয়েছি। এরপর কীভাবে পরিবার চলবে জানি না।” স্বামীকে হারিয়ে দিশাহারা আলেয়া বিবিও। স্বামীর ‘খুনে’র দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি এবং সঙ্গে এও জানিয়েছেন যে, “অল্প পয়সার চাকরি দিলে চলবে না। যাতে ভালোভাবে পরিবারের সদস্যদের প্রতিপালন করা যায় সেই মতো কোনো চাকরি দিতে হবে।” প্রতিবেশীদের দাবি, মিদ্যা রাজনীতি করতেন। তবে সম্প্রতি বাম রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছিল তাঁর। তারপরই শুক্রবার বামেদের নবান্ন অভিযানের অংশ হয়েছিলেন তিনি।
মইদুল ইসলাম মিদ্যার পরিবারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবারই তাঁরা খবর পেয়েছিলেন মিদ্যা অসুস্থ। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার খবর পেয়েছিলেন পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু মিদ্যা কীভাবে অসুস্থ হলেন বা কোথায়ই বা তাঁর চিকিৎসা চলছে, সেসব কোনো কিছুই জানতেন না তাঁরা। হঠাৎ করে এভাবে সে সকলকে ছেড়ে চলে যাবে, এখনও ভাবতেই পারছে না পরিবারসহ চোরকোলা গ্রামের বাসিন্দারাও। কিন্তু তাঁদের কোলের ছেলের মৃত্যুর জন্য দায়ী যারা, তাদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছে গোটা গ্রাম।
প্রসঙ্গত, চাকরি, শিক্ষা-সহ একাধিক দাবিতে বাম ছাত্র সংগঠন গত ১১ ফেব্রুয়ারি নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিল। বামেদের এই অভিযানকে কেন্দ্র করে রীতিমতো উত্তপ্ত হয়ে পড়েছিল কলকাতা।পুলিশের লাঠি, জলকামানের আঘাতে প্রায় ৪০ জন অসুস্থ হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন বাঁকুড়ার মইনুল ইসলাম মিদ্যা। কিন্তু গুরুতর জখম মিদ্যার এই লড়াই শেষ হয়ে গেল মর্মান্তিক পরিস্থিতিতে।