নদীয়া সংবাদনিউজরাজ্য

লকডাউনে কর্মহীন পরিবারের জন্য বিকল্প আয়ের উৎস হিসেবে গড়ে উঠল ‘মোবাইল মিষ্টান্ন ভান্ডার’

দুই পুত্রের সাথে আলোচনা করে সারা জীবনের সঞ্চয় ১০ হাজার টাকা দিয়ে মিষ্টান্ন তৈরির সরঞ্জাম কিনে লেগে পড়লেন পরিবারের সকলে।

Advertisement
Advertisement

মলয় দে নদীয়া:- শান্তিপুর শহরের চৌরঙ্গী মোড়ের মিষ্টান্ন শিল্পী জগন্নাথ দাস তার পরিশ্রম অভিজ্ঞতা দিয়ে শান্তিপুরের বহু স্বনামধন্য সুপ্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন প্রতিষ্ঠানকে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছেছেন। তবে পারিশ্রমিক পেলেও তিনি কারিগর নয় অবশ্যই শিল্পী। কারণ যখন যে দোকানে কাজ করেছেন তার কঠোর পরিশ্রম, মস্তিষ্কপ্রসূত নিপুণ স্বাদ এবং গুণগত মানবর্ধক শিল্পকর্ম শুধু শান্তিপুর নয় জেলার বিভিন্ন প্রান্তের হাজার হাজার মিষ্টান্নপ্রেমীদের ভীড় করিয়েছেন দোকানে, তাই তিনি শিল্পী।

কিন্তু লকডাউনের গোড়ার দিকে বিভিন্ন মিষ্টির দোকান গুলি বন্ধ থাকায় কুঁড়েঘর থেকে অট্টালিকা বানানো মালিকদের জগন্নাথ বাবু চিনে গিয়েছিলেন এক নিমেষে! ব্যবসায়িক মানসিকতা নিয়েই বসিয়ে মাইনে দেওয়ার বদলে তাকে দিয়ে বাজার করানো, ঘর পরিষ্কার এর বিভিন্ন গৃহস্থলি কাজের করিয়ে নেওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি শিক্ষা নিয়েছিলেন জীবনের অন্তিম লগ্নে! দুই পুত্রের সাথে আলোচনা করে সারা জীবনের সঞ্চয় ১০ হাজার টাকা দিয়ে মিষ্টান্ন তৈরির সরঞ্জাম কিনে লেগে পড়লেন পরিবারের সকলে।

পুত্র শান্তিপুর কলেজের বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সৌরভ এবং তার দাদা বিকেলের পর থেকে সাইকেলের দু পাশে মিষ্টি ভর্তি বালতি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন শান্তিপুরের বিভিন্ন পাড়ার মোড়ের মাথায়, চায়ের দোকানে জমায়াতের মাঝে। বড় সাইজের, টাটকা, বিভিন্ন উপকরণের মিষ্টি খেতে এবং হোম ডেলিভারির সুবিধা পেতে সৌরভ এর ফোন নাম্বার প্রায় সকলেরই জানা। ক্রেতারা জানান স্বাদের তারতম্য বা গুণগতমানের বিষয়ে প্রতিষ্ঠিত দোকানে অভিযোগ জানাতে গেলে কানেই শোনেন না বিক্রেতা। সৌরভের কাছে মেলে বাড়তি সুবিধা। তাই বিভিন্ন ক্লাব বারোয়ারি রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘরোয়া অনুষ্ঠানে এক ফোনই রসের জোয়ার চলে আসে বাড়িতে। এমনকি বাড়িতে হঠাৎ অতিথি আসলেই গৃহিণীদের ডাকে সাড়া দিতে চলে আসে সৌরভ।

শুধু সৌরভ কেনো? শান্তিপুর শহরের ফটোক পাড়ার বাসিন্দা সন্তু বিশ্বাস অর্থাভাবে পড়াশোনা করতে পারিনি ভাই এগারো ক্লাসে পড়ে! বাবা গৃহস্থের বাড়িতে গরু দোয়ানোর এর কাজ করতেন। লকডাউনে সমস্ত মিষ্টির দোকান দুধ থেকে তৈরি ছানা নেওয়া বন্ধ করে দিল। সেই সময়ে থানা বিক্রি করতে গিয়ে তৈরি হয়েছিল বেশকিছু পথচলতি ক্রেতা। সন্তুর ব্যবহার রসগোল্লার মতোই মিষ্টি হওয়ায় আজ শুধুমাত্র মোবাইল ফোনের অর্ডার হার মানিয়েছে বড় বড় মিষ্টান্ন প্রতিষ্ঠানকেও। লকডাউন শিখিয়ে গেল অনেক কিছু!

শুধুমাত্র সন্তু,সৌরভ নয় আগামীতেও বিকল্প পথ খুঁজে পেতে বর্তমান প্রজন্ম মরিয়া! হয়তো আপনার পাড়ায়ও এই রকম বহু সন্তু সৌরভকে দেখতে পাবেন আগামীতে। অনুরোধ আপনার একটু সহযোগিতা পাল্টে দিতে পারে সমাজের অর্থনৈতিক রূপরেখা।

Related Articles