দেশনিউজ

৩ বিয়ে, ২০ প্রেমিকার সঙ্গে যৌন মিলন করে খুন করে এই স্কুল শিক্ষক

২০ জন তরুণীকে খুনের দায়ে অভিযুক্ত মোহন কুমারের আর এক নাম ‘সায়ানাইড মোহন’।

Advertisement
Advertisement

একের পর এক খুন, ধর্ষণ করেও আদালতে বিচারকের সামনে অপরাধী জানায় সে নির্দোষ। এই কাহিনী শুনলে আপনার গা শিউরে উঠবে। এই অপরাধী বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা, পেশায় শিক্ষক মোহন কুমারের। খুন করার জন্য সে ব্যবহার করত পটাসিয়াম সায়ানাইড। ২০ জন তরুণীকে খুনের দায়ে অভিযুক্ত মোহন কুমারের আর এক নাম ‘সায়ানাইড মোহন’। এবার পুরো ঘটনাটা পরিষ্কার করে বলি। ২০০৩ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত এই ৬ বছরে দক্ষিণ কর্নাটকের পাঁচ জেলার ছয় শহরে অস্বাভাবিকভাবে মৃত্যু হয়েছিল ২০ জন তরুণীর।

আর এই তরুণীদের প্রত্যেকের বয়স ছিল ২০-৩০-র মধ্যে। অসচ্ছল পরিবার অথচ বিয়ে করতে মরিয়া এমন তরুণীদের বেছে নিত মোহন কুমার। এদের সাথে প্রেমের নাটক করত, তারপর বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাত্রিবাস করত। আর এরই মধ্যেই এদের ঋতুচক্রের দিনও জেনে নিত। তারপর সুযোগ বুঝে হোটেলে রাত্রিবাস করত সে। যাতে অবাঞ্ছিত সন্তানপ্রসব আটকাতে তারা গর্ভনিরোধক ওষুধ খেতে বাধ্য হয়। আর সেই ওষুধের মধ্যেই দেওয়া থাকত পটাসিয়াম সায়ানাইড। সব তরুণীদের বাড়ি থেকে বহু দূরে বাসস্ট‌্যান্ড লাগোয় হোটেল বেছে নিত সে। আর প্রত্যেকটা দেহ পাওয়া গিয়েছিল বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া শৌচাগারে। আর দেহগুলিকে উদ্ধার করতে হত দরজা ভেঙে। কারণ শৌচাগারের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ থাকত।

এই প্রতিটি তরুণী বিয়ের সাজে ছিল। কিন্তু এদের কারোর গায়ে কোনো গয়না থাকত না। তাঁর কারণ বিয়ের নাটক করে তাদের সাথে রাত্রিবাস করার পরে সুযোগ বুঝে তাদের বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে যেত সে। আর হোটেলেই বিয়ের গয়না খুলে রাখতে বাধ্য করত সে। এরপর বাসস্ট্যান্ডের লাগোয়া শৌচালয়ে গিয়ে ওই গর্ভনিরোধক ওষুধ খেতে বলত সে। আর এরপর এদের মৃত্যু নিশ্চিত জেনে হোটেল থেকে গয়না ও অন্য মূল্যবান জিনিস নিয়ে পালিয়ে যেত মোহন কুমার। পুলিশের জেরার মুখে এইসব কথা স্বীকার করেছে সে।

তবে এতো কিছুর পরেও সে নিজেকে বলত নির্দোষ। পুলিশকে সে জানিয়েছিল, প্রথমে প্রেমের অভিনয় আর বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে সে তরুণীদের মন জয় করত, আর তারপরেই সেই তরুণীরা তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে নতুন সংসার করার আশায় বাড়ি থেকে পালাতেন। আর তাঁদের সঙ্গে থাকত গয়না। মোহন কুমার জেলে থাকার সময়ে তার মধ্যে কোনো অনুতাপ দেখা যায়নি। চুলে কলপ,আঁচড়ানো চুল, , বুকপকেটে কলম আর নোটবুক নিয়ে সে বিচারকের সামনে হাজির হয়। এমনকি বিচারকের সামনে নোটও লিখে রাখে নোটবুকে। আর বারবার সে খুনের কথা অস্বীকার করেছে, সে বলেছে সে তরুণীদের বিয়ে করতে চায়নি বলেই তাঁরা আত্মঘাতী হয়েছেন।

মোহন মেঙ্গালুরুর এক গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ছিল। সে ইংরেজি, বিজ্ঞান এবং গণিত পড়াত। গ্রামের স্কুলের ছাত্রী মেরি ছিলেন মোহনের প্রথম স্ত্রী। মেয়েটির ১৮ বছর হবে পর্য্য অপেক্ষা করে সে তাঁকে বিয়ে করে। এরপর তাঁদের ডিভোর্স হলে সে বিয়ে করে মঞ্জুলাকে। তাদের দুই সন্তান। কিন্তু এরপর বিচ্ছেদ হয়ে গেলে সে বিয়ে করে তৃতীয় স্ত্রী শ্রী দেবীকে। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। তাদের বিচ্ছেদ হয়। এরপরেই সে প্রেমের নাটক শুরু করে। মোহন জেরায় জানিয়েছে যে তাঁদের সবার জন্য মনখারাপ হয়েছে ঠিকই। কিন্তু ১৫ দিন পরে নতুন ‘প্রেমিকা’ পাওয়ার পর সব ঠিক হয়ে গিয়েছে।

পাঁচটি মামলায় মৃত্যুদণ্ড এবং তিনটি ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাবাসে দণ্ডিত এই মোহন কুমার। সে আর বিয়ে করল না কেন তার কারণ হিসাবে সে জানিয়েছে দ্বিতীয় আর তৃতীয় স্ত্রীকে সামলাতে গিয়ে সে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। তাই আর বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল না তাঁর। এছাড়া সে জেরায় জানিয়েছে, তার শিকারের সংখ্যা ৩২! যদিও বারোটি মামলায় তার বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রতি বার তরুণীদের ফাঁদে ফেলার সময় সে নিজের পরিচয় দিত সরকারি কর্মী হিসেবে। তার কাছে একটা ডায়েরিতে লেখা থাকত নিহত তরুণীদের নাম ও ঠিকানা। পরে এই ডায়েরি হয়ে ওঠে পুলিশের কাছে অন্যতম সাক্ষ্যপ্রমাণ।

Related Articles