লেখক কামিনী রায়ের ভাষায় “সকলের তরে সকলে আমরা,প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।” কিন্তু এই কথাটা কতজনই আমরা মেনে চলি। আমরা বেশিরভাগ মানুষই নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে ব্যাস্ত। কিন্তু এমন কিছু মানুষ আছে যারা নিজেদের থেকে অন্যের কথা বেশি চিন্তা করে। তবে এরকম মানুষের সংখ্যা খুবই কম। এমনই একজন মানুষ ছিলেন অনুজিথ। যিনি জীবিত অবস্থায় যেমন বাঁচিয়েছেন কয়েকশো প্রাণ সেরকম তার মৃত্যুর পরেও যেনো মানুষের ভালো কিছু হয় সেই কথা ভেবেছেন তিনি। মৃত্যুর পরেও ৮ জনকে বাঁচিয়েছেন তিনি। এদের এক কথায় মানুষরূপী ভগবান বলা চলে।
গত ১৪ জুলাই কেরলের কোট্টারকারা এলাকায় বাইক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয় অনুজিথ। তারপর তাকে তিরুবনন্তপূরমে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসার জন্য। কিন্তু শেষ রক্ষা করা যায়নি। চিকিৎসকরা অনুজিথের ব্রেন ডেথ বলে জানান। হয়তো ভালো মানুষ বেশিদিন বাঁচেনা। তারা হয়তো শুধু পৃথিবীতে আসে কিছু ভালো কাজ করার জন্যই। তাই মাত্র ২৭ বছর বয়সেই তাকে চলে যেত হল এই পৃথিবী ছেড়ে।
মৃত্যুর আগে অনুজিথ তার স্ত্রী এবং তার বোনের কাছে তার অঙ্গদানের ইচ্ছাপ্রকাশ করে গিয়েছিল। সেই মতোই অনুজিথের অন্ত্র, চোখ, হাত হৃদপিন্ড ও কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় অন্যের শরীরে। অনুজিথের হৃদপিন্ড ৫৫ বছর বয়সী সানি থমাস নামে একজন ব্যাক্তির শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। যার ফলে এই ব্যাক্তি পেয়েছে নতুন জীবন। পৃথিবীতে না থেকেও অনুজিথ মানুষের ভালো করে গেল।
২০১০ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে নিজের জীবনের পরোয়া না করে বহু মানুষের জীবন বাঁচিয়েছিল অনুজিথ। অনুজিথ এবং তার বন্ধুরা সেবারে রেল লাইন ধরে হাঁটছিল। সেই সময় তারা লক্ষ্য করে যে রেল লাইনে ফাটল রয়েছে। এদিকে সিগন্যাল খোলা থাকায় কয়েকশো মানুষ নিয়ে প্রচন্ড বেগে ছুটে আসছিল ট্রেন। তখন তারা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে রেল লাইনে দাঁড়িয়ে লাল ব্যাগ দেখিয়ে ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে বিপদের ইঙ্গিত দিয়েছিল। ড্রাইবার বিপদ বুঝে ট্রেন থামায় এবং বহু মানুষ বিরাট বিপদ থেকে রক্ষা পান। তাই এই পৃথিবীতে অনুজিথের মতো মানুষের খুবই প্রয়োজন।