মৃত্যুর কাছে পরাজিত অপরাজিত অপু। হাজারো বাঙালিকে কাঁদিয়ে চিরবিদায় নিয়েছেন বাঙালির ফেলুদা। প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মানলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। গত রবিবার বেলা ১২.১৫ নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অভিনেতা সৌমিত্র। রক্তমাংসের সৌমিত্র আজ না থাকলেও অভিনেতার সিনেমা তার অভিনয়,স্মৃতি চির অমর। এবার ছানাদাদু সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শেষ ইচ্ছে পূরণের দায়িত্ব নিলেন তারকা সাংসদ দেব।
করোনাই যেন অনুঘটকের মতো অভিনেতা সৌমিত্রকে এগিয়ে নিয়ে গেল না-ফেরার দেশে। অভিনেতাকে যখন ৬ অক্টোবার বেলভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল চিকিৎসার জন্য তখন তিনি করোনা আক্রান্ত ছিলেন ঠিকই কিন্তু পরবর্তীকালে করোনামুক্ত হয়ে যান অভিনেতা। কিন্তু চিকিৎসকদের সূত্রে জানা যায়,গত রবিবার ১৫ নভেম্বর মাল্টিঅর্গান ফেলিওর, ব্রেনডেথ হয়ে মৃত্যু হয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। ৪০ দিন ধরে বেলভিউতে ভর্তি ছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। খুব স্বাভাবিক ভাবেই তাই করোনামুক্ত শরীর একটু-একটু করে হারাতে বসেছিল রোগের সঙ্গে লড়াইয়ের ক্ষমতা। ফলে তাঁকে দীর্ঘদিন লাইফ সাপোর্টে রাখতেও হয়েছিল।
টলিপাড়ার সকলে তাদের গুরু হিসেবে মানেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে। সেই তালিকায় রয়েছেন অভিনেতা দেবও। সাঁঝবাতি সিনেমায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাথে অভিনয়েরও সুযোগ পেয়েছিলেন দেব। দেবের কাছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় হলো তার ‘ছানা দাদু’। এবার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের এক ইচ্ছা পূরণ করতে ময়দানে নামল দেব।
আসলে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের একটা ইচ্ছা ছিল সেটা হল দীর্ঘ ৮৫ বছরের জীবনের সমস্ত খারাপ ভালো অভিজ্ঞতা একটি সিনেমার মাধ্যমে মানুষের কাছে তুলে ধরবেন। নিজে খসড়াও লিখতে শুরু করেছিলেন অভিনেতা। আর এবার সেই কাজটি করবেন দেব। টেবিলে পড়ে থাকা খসড়াকে এবার সিনেমার রূপ দেবেন অভিনেতা দেব। সব ঠিকঠাক থাকলে চলতি বছরের ডিসেম্বরেই সিনেমার কাজ শুরু হবে বলে খবর।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার কেওড়াতলা মহাশ্মশানে রাজ্যের তরফে গান স্যালুটে অন্তিম বিদায় জানানো হয় বর্ষিয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে। সেই সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কলাকুশলী শিল্পীরা। কান্নায় ভেঙে পরেন সৌমিত্র কন্যা। রবীন্দ্র সদন থেকে কেওড়াতলা মহাশ্মশান পর্যন্ত পদযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পদযাত্রার ছেয়ে গিয়েছিল অগণিত ভক্তদের ঢল। মোমবাতি হাতে নিয়ে প্রাণের অভিনেতাকে শেষ বিদায় জানায় অনুরাগীরা। আলোর উৎসব এর মাঝেই যেন মুহূর্তের মধ্যে ঘনিয়ে আসে অন্ধকার।