চাঁচল: কথায় বলে ‘সবুরে মেয়া ফলে’। আর ঠিক তেমনটাই হলো চলতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সঞ্জয়ের সাথে। জুতো সেলাই করে যাদের সংসার চলে সেই ঘরেই ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে মালদহের মেধাবী ছাত্র সঞ্জয়।
শুক্রবার প্রকাশিত হয়েছ ২০২০ সালের উচ্চ মাধ্যমিকের ফল। চলতি বছর রেকর্ড পাসের হার। ৯০.১৩% পাস করেছে এই বছর। কিন্তু যে ঘরে নুন আনতে পান্তা ফুরায় সেই ঘরে ৯০ শতাংশ নম্বর জানো আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া। সঞ্জয়দের বাড়ি মালদহের চাঁচলে। তাঁর যখন দেড় বছর বয়স তখন মারা যান তারা বাবা জগদীশ। আর তাতেই ছোট ছোট সন্তানদের নিয়ে অথৈ জলে পড়েন জগদীশের স্ত্রী কল্যাণী। অন্যদিকে ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠছিল সঞ্জয়। একটু বড় হয়ে মাকে সাহায্য করতে কাজে নেমে পড়েন সঞ্জয়। দাদা সাগরের সঙ্গে মিলে জুতো সেলাই করতেন। থেমে থাকেনি পড়াশোনা। জুতো সেলাইয়ের পাশাপাশি চলত পড়াশোনা।
আর এভাবেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাও দেয় সে। কিন্তু এই বছর করোনা প্রকোপে মাঝপথেই উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। যার জেরে সঞ্জয়ের ভূগোল পরীক্ষা আর হয়নি। তিনি ফের বসেছিলেন জাতীয় সড়কের ধারে, জুতো সেলাইয়ের সরঞ্জাম নিয়ে। তবে, এই অবস্থাতেও তার ফল দেখে খুশি সকলেই। ৪৫১ পেয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর কনুয়া হাইস্কুলে প্রথম হয়েছেন সঞ্জয়। ভবিষ্যতে যাতে মেধাবী ছাত্রের পড়াশোনা করতে কোন সমস্যা না হয়, প্রশাসনের তরফে দেখবে বলেই জানানো হয়েছে।
স্নাতক স্তরে ইংরেজি নিয়ে পড়ার ইচ্ছা মেধাবী ছাত্র সঞ্জয়ের। যদিও টাকা কথা থেকে আসবে সেই চিন্তায় পড়েছে পরিবারের সকলেই। এই প্রসঙ্গে সঞ্জয় জানায়, ‘ ইংরেজি নিয়ে স্নাতক স্তরে পড়ার ইচ্ছে আছে। সংসারের খরচ আছে। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে পড়তে গেলেও টাকা লাগবে’। যদিও সঞ্জয়ের উচ্চমাধ্যমিকের ফলের খবর চাউর হতে চাঁচল-১ ব্লকের বিডিও সমীরণ ভট্টাচার্য নিজে সঞ্জয়ের বাড়িতে যান। তাঁর মায়ের জন্য বিধবা ভাতার বন্দোবস্ত করেন। এমনকি সঞ্জয়ের উচ্চ মাধ্যমিকের ফল শুনে সমীরণ ভট্টাচার্য্য জানান, ‘খুব ভাল খবর। ভবিষ্যতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তা দেখবে প্রশাসন’।