মৃত্যুর পর একটা মানুষকে কি বলেই বিলীন হয়ে যায় নাকি তার পরেও কিছু রয়ে যায়, এ সকল বিষয় আমাদের অজানা। কিন্তু যার কথা বলা হচ্ছে তিনি নেই আবার আছেন ও। না থেকেই তিনি পাহারা দিয়ে চলছেন দেশের সীমান্ত এমনই বিশ্বাস ভারতীয় সেনাবাহিনীর। তাদের কাছে হরভজন সিংহ দেবতা, মৃত্যুর পর বছরের পর ধরে দেশকে এবং জওয়ানদের রক্ষা করে চলেছেন।
1965 সালে তিনি সেনাবাহিনীর পাঞ্জাব রেজিমেন্টের যোগদান করেন। 1968 সালে তিনি কর্মরত ছিলেন নাথু গিরিপথে। এই দুর্গম ও সঙ্কীর্ণ গিরিপথ কয়েক বছর আগেই সাক্ষী ছিল ইন্দোচীন এর যুদ্ধের। সীমান্তবর্তী এই অংশে হরভজন সিংহ রওনা দিয়েছিলেন প্রত্যন্ত ও দুর্গম আউটপোস্ট এর পথে। কিন্তু কয়েকদিন ধরেই বৃষ্টি ও ধসে প্রতিকূল ছিল পরিস্থিতি কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেননি, পাওয়া যায় তার নিথর দেহ। জনশ্রুতি স্বপ্নের মাধ্যমে তিনি নিজেই হদিশ দেন তার নিথর দেহের।
মনে করা হয় মৃত্যুর পরেও নাকি তিনি নিজের পথে অবিচল ছিলেন। শত্রু পক্ষ থেকে আসা আগামী বিপদের ব্যাপারে আগে থেকেই সতর্ক করতেন সেনা জওয়ানদের। এমনকি কোনো সেনার পোশাক সামান্য অবিন্যস্ত থাকলে তার গালে শূন্য থেকে উড়ে এসে পড়তো থাপ্পর। পূর্ণিমার রাতে চরাচর ভেসে যাওয়া দুধ সাদা নরকের মাঝে নাকি ঘোড়ার পিঠে টহল দিতে দেখা যায় তার ছায়ামূর্তিকে। তার উপস্থিতি প্রতিমুহূর্তে অনুভব করতে পেরে নাথুলায় ঠিক করা হয় মন্দির তৈরি করে রক্ষা হবে তার স্মৃতি। সেনাকর্মী থেকে তিনি তখন হয়ে উঠলেন বাবা হরভজন সিংহ।
গ্যাংটক থেকে 52 কিমি দূরে নাথু আর জেলেপ গিরিপথে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 13123 ফিট উচ্চতায় আছে বাবা মন্দির। 12 বছর আগে পর্যন্ত প্রতি বছর নিজের বার্ষিক ছুটি পেতেন তিনি। 11 সেপ্টেম্বর তার জিনিসপত্র নিয়ে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন যেত জিপ। সেখান থেকে ট্রেনে করে সেই জিনিস যত পাঞ্জাবের কপূরথালা জেলার কোকে গ্রামে। যেখানে থাকনে তার পরিজনরা। এভাবেই ঘরের ছেলে ফিরে যেত ঘরে। সম্প্রতি একটি শর্টফিল্ম প্লাস-মাইনাস ফিরিয়ে এনেছে হরভজন সিংহের স্মৃতি। নিজের গ্রামে তিনি শহীদের মর্যাদা পান। ভারত-চীন সীমান্তে আবার উত্তেজনার পরিবেশে আরো একবার আলোচনায় ফিরে এসেছেন তিনি।