মৌমিতা সাহা: বর্তমানের করোনাভাইরাস এর জেরে যে দুর্দশাগ্রস্ত সামাজিক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে সেখানে আমাদের প্রিয় বন্ধু তথা পুলিশকর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী, সাফাই কর্মী, এবং ডাক্তার ও নার্স এনাদের ভূমিকা অতুলনীয়! এই পরিস্থিতিতে যেখানে আমরা নিজেদেরকে বাঁচাবার জন্য ঘরের মধ্যে আটকে রেখেছি, এবং বিভিন্ন সাবধানতা অবলম্বন করে একান্ত দরকার ছাড়া বাইরে পা পর্যন্ত রাখছি না সেখানে উপরিক্ত এই কর্মীরা দিনের পর দিন আমাদের সুস্থ রাখার উদ্দেশ্যে করে চলেছে আঘাত পরিশ্রম!।
এমনই এক হাসপাতলে অর্থাৎ ‘মেডিকা সুপারস্পেস্যালিটি হসপিটাল’-এ কর্মরত এক দম্পতি যার মধ্যে একজন নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ, এবং একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ। এরই মাঝে এই দম্পতি তাদের বিবাহের 25 বছর সম্পূর্ণ করেছেন। কিন্তু বর্তমানের করোনা ভাইরাস তাদের সমস্ত আনন্দ এবং উৎসাহে জল ঢেলে দিয়েছেন। সারা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সারা শরীরে পি পি ই কিট পড়ে রোগী দেখতে দেখতে তাদের এই দিনটির উদযাপন করা তো দূরে থাক একে অপরের সাথে ঠিকঠাক করে দেখা পর্যন্ত করতে পারেনি।
ঠিক এরই মাঝে সেই হাসপাতালে অন্যান্য সহকর্মীরা করে দিলেন তাদের এই বিবাহ বার্ষিকী উদযাপনের জন্য একটি ছোট্ট সারপ্রাইজের পরিবেশনা। সারাদিন জ্বর, হাঁচি, কাশি, মাথা এবং গলা ব্যথা, ইত্যাদি আরো অন্যান্য উপশমের রোগী দেখতে দেখতে ই এন টি বিশেষজ্ঞ কর্তা অর্থাৎ ডক্টর অর্জুন দাশগুপ্ত যেন সময়ই পাচ্ছেন না, একইভাবে তার স্ত্রী অর্থাৎ ডক্টর চন্দ্রিমা দাশগুপ্ত ও একের পর এক রোগী দেখতে দেখতে একটুও ফাঁকা সময় পাচ্ছেন না।
কিন্তু তারই মাঝে, দুপুরে দু মিনিটের জন্য সময় বের করে হাসপাতালে রেস্ট রুমে এসে অবাক হয়ে গেলেন এই দম্পতি! এসে দেখলেন সেখানে মালা বদল করার সমস্ত রকম সরঞ্জাম রেডি, এবং সহকর্মীরা পাশের থেকে একত্রে চিৎকার করে বললেন “আর দেরি নয়, শুভস্য শীঘ্রম!” এবং সহকর্মীদের ইচ্ছেতেই পূরণ হলো সেই দম্পতির 25 বছরের বিবাহ বার্ষিকীর উদযাপন। তারা সেখানে সার্জিক্যাল ক্যাপ, এবং মাস্ক পরে সেই হাসপাতালের রেস্ট রুমেই সেরে ফেললেন তাদের মালাবদল।
ইতিমধ্যেই এই ডক্টর দম্পতির 25 বছর উদযাপনের ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন ভাইরাল। সহকর্মীরা জানিয়েছেন,” ডাক্তারবাবুর এখন ভয়ঙ্কর রকম কাজের চাপ!, সেলিব্রেশন করবার মতন কোনো সময়ই তাদের হাতে নেই । তাই হাসপাতালেই তাদের মালাবদলের ছোট্ট একটি প্রচেষ্টা আমাদের তরফ থেকে করা হয়েছে”। ডক্টর অর্জুন দাশগুপ্ত এবং তার স্ত্রী ডক্টর চন্দ্রিমা দাশগুপ্ত জানিয়েছেন,” 25 বছর উদযাপনের জন্য আমাদের পরিকল্পনা ছিল অনেক। আমরা আমাদের এই স্মৃতিটির উদযাপন ধুমধাম করেই করব বলে ঠিক করেছিলাম। কিন্তু কে জানতো যে এই ভাইরাস করোনা আলাদাই পরিকল্পনা করে রেখেছে।
ই এন টি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার অর্জুন দাশগুপ্তের কথায়,” সমস্ত কিছু দেখে শুনে আমরা ঠিক করেছিলাম বড় করে অনুষ্ঠান করব না। কারণ করোনার দীর্ঘ লকডাউন এ অনেকেই কাজ হারিয়েছেন, দুবেলা ঠিকমত খাবার জুটছে না অসংখ্য মানুষের, সেই খানে দাঁড়িয়ে আমাদের 25 বছর উদযাপন করার কোন মানেই হয়না”। তিনি আরোও বলেন যে,” হতদরিদ্র মানুষের জন্য যাদবপুরে একটি ক্যান্টিন রয়েছে যেখানে দিন আনে দিন খায় শ্রমজীবী মানুষেরা মাত্র কুড়ি টাকায় খাবার পাচ্ছেন প্রতিদিন। আমি এবং আমার স্ত্রী এই শ্রমজীবী ক্যান্টিনের মানুষগুলোর একবেলার ভার নেই।”
আর এটাই তাদের উদযাপন।।