২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যে ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচির অন্তর্গত ‘স্বাস্থ্যসাথী’ কার্ডের প্রকল্প চালু করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শাসক শিবিরের অনেকেই এই প্রকল্প চালু করাকে ভোটের আগের রাজনৈতিক ‘মাস্টারস্ট্রোক’ বলে গণ্য করেছেন। কেউ কেউ একধাপ এগিয়ে বলছেন ‘গেমচেঞ্জার’। প্রকল্পটিতে পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে পরিষেবা পাবেন কার্ডহোল্ডাররা। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও যে এই প্রকল্প নিয়ে অভিভূত, তার আভাস পাওয়া গেল শুক্রবার আয়োজিত ২৬ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানের শেষলগ্নে মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত অভ্যাগতদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘আপনারা কিন্তু সকলে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডটা করিয়ে নেবেন। ফিল্মস্টার থেকে টেকনিশিয়ান— সকলে। পাঁচ লক্ষ টাকা ক্যাশলেস-এর সুবিধাও পাবেন”।
কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী মঞ্চে হাজির ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্র জগতের বহু তারকা-সেলেবরা। বলিউডের পরিচালক অনুভব সিন্হা-ও উপস্থিত ছিলেন। এমনকি ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগ দেন বাংলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডর শাহরুখ খান। যদিও করোনা আবহে অন্যান্যবারের মতো এ বার ফিল্মোৎসবে সেই জাঁকজমক নেই। প্রত্যাশিত ভাবেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মমতাও জোর দিয়েছেন করোনার সতর্কতা বিধির উপর। সশরীরে না হলেও ভার্চুয়ালভাবে উপস্থিত থেকেও আক্ষেপ কিছুটা রয়েছে কিং খান-এর। শাহরুখ বলেন, করোনার ভয়ঙ্কর অতিমারী থেকে শিক্ষা পেয়েছেন, জীবনের সবচেয়ে দামী জিনিস পরিবার। শাহরুখ বলেন, ‘‘কলকাতা আমার পরিবার। পশ্চিমবঙ্গ আমার পরিবার। খুব দ্রুতই বাংলায় যাব।’’ তিনি আরও জানান যে, পরের বার কলকাতায় এলে আগে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীও শাহরুখকে ‘ভাই’ সম্বোধন করে রাখিবন্ধনে আসার আমন্ত্রণ জানান। মমতা-শাহরুখ সম্পর্ক বরাবরই ঘনিষ্ঠ। প্রতিবারই নেতাজি ইন্ডোরে ফিল্ম উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসেন কিং খান। উল্লেখ্য এই অনুষ্ঠান বাম আমলে আয়োজিত হত নন্দনে, কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী এই অনুষ্ঠানটিকে সার্বজনিক রূপ দেন, ঘটনাচক্রে, তাঁর অন্যতম প্রিয় সেই অনুষ্ঠানই এবার হল নবান্নের সভাঘরে।
এই মুখ্যমন্ত্রী অনুষ্ঠানের সূচনা করেন এবং বলেন, ‘‘এ বারের উৎসবের আগে বহু শিল্পীকে হারিয়েছি আমরা। তার দুঃখ রয়ে গিয়েছে।’’ তবুও সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি মেনে হল মালিকদের কাছে আবেদন করোনাবিধি মেনে দর্শকদের ছবি দেখার ব্যবস্থা করে দেওয়ার। উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন রঞ্জিত মল্লিক, গৌতম ঘোষ, কৌশিক সেন, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সাংসদ নুসরত জাহান, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, দেব, তনুশ্রী চক্রবর্তী, সোহম চক্রবর্তী, পায়েল সরকার, অরিন্দম শীল, ঋতাভরী চক্রবর্তী প্রমুখ জনপ্রিয়রা। কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব চলবে আগামী ১৫ ই জানুয়ারি পর্যন্ত। করোনা সতর্কতা বিধি মেনেই নন্দন, শিশির মঞ্চ, রবীন্দ্র সদন সহ মোট আটটি প্রেক্ষাগৃহে ছবি দেখানোর ব্যবস্থা হয়েছে। প্রসঙ্গত, কোভিড ১৯-এর জন্য এ বার চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজন নিয়ে সমস্যা ছিল। ছোট করে হলেও উৎসব হবে এমন ঘোষণা করেছিলেন মাননীয়া। সেইমতোই শুক্রবার উৎসবের উদ্বোধন হল।
উল্লেখ্য, কোভিড পরিস্থিতিতে এই উৎসবে সিনেমা দেখার জন্য বার দু’দিনের অগ্রিম টিকিট বুক করার ব্যবস্থা ছিল অনলাইনে। শুক্রবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব কমিটি জানিয়েছে, যাঁরা অনলাইনে ‘বুক মাই শো’-এর মাধ্যমে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত আসন সংরক্ষণ করেছিলেন, তাঁরা হলে এসে সংরক্ষিত আসনে বসেই সিনেমা দেখতে পারবেন। আর ওই দু’দিনে যে সমস্ত আসনের অনলাইন বুকিং হয়নি, সেই সব আসনে হলে এসে সিনেমা দেখতে পারবেন বিশেষ অতিথি, অতিথি ও সংবাদমাধ্যমের কার্ড থাকা দর্শকরা।
