করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি বা কোথা থেকে ছড়ালো করোনা ভাইরাস? তা নিয়ে এর আগে অনেক বিজ্ঞানী অনেক রকম মন্তব্য করেছেন। কেউ বলেছে চীনের উহান মার্কেট থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে, আবার কারো মতে চীনে বিশেষজ্ঞরা করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণা করছিল। সেখান থেকে কোনভাবে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে। তবে গবেষকদের মধ্যে একাংশ ধারণা করেছেন এই ভাইরাসটি ছড়ানোর আসল কারণ বাদুর।এবার করোনা ভাইরাস ছড়ানোর আসল কারণ তুলে ধরল ভারতীয় গবেষকরা। তাঁদের মতে, বাদুর থেকেই SARS-CoV-2 এর উৎপত্তি।
কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডঃ সুপ্রভাত মুখোপাধ্যায় ও তাঁর ছাত্র অভিজ্ঞান চৌধুরির করোনা ভাইরাস উৎপত্তির কারণ নিয়ে একটি নতুন গবেষণার সংক্ষিপ্ত রিপোর্ট সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে আমেরিকান মেডিক্যাল জার্নাল, যথা- ‘জার্নাল অফ মেডিক্যাল ভাইরোলজি’তে। ওই রিপোর্টে নানা যুক্তি দিয়ে দাবি করা হয়েছে বাদুর থেকেই নোভেল করোনার উৎপত্তি। এর পাশাপাশি করোনা ভাইরাসের চরিত্র চিহ্নিত করে তা প্রতিহত করার একটি উপায়ের সন্ধানও দিয়েছে ওই বাঙালি গবেষকরা। গবেষণার রিপোর্টে দেখা গিয়েছে কোন ভাইরাসের মধ্যে রয়েছে স্পাইক নামক একটি প্রোটিন। এর জন্যই করোনাভাইরাস দেখতে অনেকটা মুকুটের মতো। এই স্পাইক প্রোটিনই মানুষের এনজিওটেনসিন কনভার্টিং এনজাইম -২ রিসেপ্টারের সঙ্গে যুক্ত। এই স্পাইক প্রোটিনের দ্বাড়াই ভাইরাস ফুসফুসের কোষগুলোর পর্দায় অবস্থিত রিসেপ্টরে আটকায় এবং যথা সময়ে কোষের পর্দা ভেদ করে কোষের ভিতরে ঢুকে পড়ে ধীরে ধীরে সংক্রমণ ছড়ানোর কাজ শুরু করে। কোষের ভিতরে ঢুকে ভাইরাসটি প্রথমে RNA তন্তুটিকে কোষের প্রোটিন তৈরির মেশিন হিসেবে ব্যবহার করে। এরপর ভাইরাসটি ধীরে ধীরে প্রোটিন তৈরির মাধ্যমে ভাইরাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে থাকে।
এর ফলে শরীরে রোগ-প্রতিরোধক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে এবং শরীর দুর্বল হতে থাকে। ভাইরাস প্রথমে ফুসফুস ও গলার কষ্টে ক্ষতিগ্রস্ত করে যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি শরীরে প্রথমে নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। এরপরে ইনফেকশন ধীরে ধীরে যখন বাড়তে শুরু করে চরম পর্যায়ে পৌঁছে তখন আক্রান্ত ব্যক্তির প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হয় এবং মৃত্যু ঘটে।
ভারতীয় দুই গবেষকদের মধ্যে মুখ্য গবেষক ডক্টর সুপ্রভাত মুখোপাধ্যায় বলেন, “গবেষণায় দু’টি বিষয়ের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। প্রথমটি হলো, নোভেল করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি এবং দ্বিতীয় হলো সংক্রমণ প্রতিহিত করার উপায়। আমরা বায়োফরমেটিক্স প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রমাণ করতে পেরেছি যে করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি বাদুর থেকেই। এই ভাইরাস মানব শরীরে যে পদ্ধতিতে স্পিনাচ করেছে তা শুধুমাত্র বাদুরের মধ্যে লক্ষ্য করা গিয়েছে। মানবদেহে ফুসফুসের কোষে এই প্রোটিনের বিরুদ্ধে ফাংশনাল অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারলেই কোন ভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরি সম্ভব হবে।
গবেষকদের মধ্যে দ্বিতীয় জন অর্থাৎ অভিজ্ঞান চৌধুরী বলেন, করোনা ভাইরাসের ইনফেকশন কে প্রতিহত করতে যে অ্যান্টি বডি প্রয়োজন তা হলো কোনোভাবেই ওই ভাইরাসকে ফুসফুসের কোষের রিসেপ্টরে সংযুক্ত হতে দেওয়া যাবে না। এতে ভাইরাস কোষের পর্দা ভেদ করে ভেতরে ঢুকতে পারবে না এবং বংশবৃদ্ধিও করতে না পারে। এই রিপোর্টটি প্রতিষেধক তৈরি করতে সাহায্য করবে।” কোভিড-১৯ এর সঙ্গে সার্স ও মার্চের জিনগত মিল রয়েছে। এর সাথে সার্স করোনা ভাইরাসের জিনগত মিল ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ থাকায় একে SARS-CoV-2 নামে অবহিত করা হয়।