দেশনিউজ

দেশে এই প্রথম মহিলাদের সুবিধার্থে চালু হল ‘পিরিয়ড রুম’

Advertisement
Advertisement

মহিলাদের জন্য বিশেষ কিছু সুযোগ সুবিধা দেওয়া উচিত এই প্রসঙ্গ চলমান। এবার তাঁদের সুবিধার জন্য মহারাষ্ট্রের থানেতে একটি বিশেষ ধরনের সাধারণ শৌচাগার চালু হল। নাম দেওয়া হয়েছে পিরিয়ড রুম। এই পিরিয়ড রুম এর দেওয়ালে দীপ্তিময়ী রং-এ আঁকা রয়েছে ছটফটে মেয়েদের ছবি এবং পরামর্শ দেওয়া আছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার। ঝকঝকে এই শৌচালয় গুলিতে জেট-স্প্রে, হাত ধোওয়ার সাবান, টয়লেট পেপার রাখার জায়গা, ডাস্টবিন সহ আধুনিক সব সুবিধা রয়েছে। প্রশাসনিক কর্তারা জানিয়েছেন ভবিষ্যতে গোটা রাজ্যেই এমন শৌচালয় গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।

থানের ওয়াগল এস্টেটের শান্তিনগর এলাকায় এই গণ শৌচালয়টি তৈরি করেছে থানে পুরসভা, একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাতে সাহায্য করেছে। প্রশাসনের এক আধিকারিকের মন্তব্য, মূলত ঘিঞ্জি বস্তিতে বাস করা মহিলাদের কথা চিন্তা করেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঋতুকালীন সময়ে স্বাস্থ্যের প্রতি মহিলাদের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়। নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা উচিত ওই সময়ে, অথচ বস্তির বেশির ভাগ বাড়িতে নিজস্ব শৌচাগার নেই, জল সরবরাহ পর্যাপ্ত নয়, মহল্লার সাধারণ শৌচাগার ব্যবহার করলেও নানা রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়, তাঁদের পাশে দাঁড়াতেই এই প্রশাসনিক উদ্যোগ। ওই কর্তা বলেছেন, ‘‘ সাধারণত ৪৫০০০ টাকা মত খরচ হয় এই ধরনের একটি শৌচাগার গড়তে। ভবিষ্যতে শহরের ১২০টি সাধারণ শৌচালয়েই এই পরিষেবা গড়ে তোলার ভাবনা আমাদের রয়েছে।”

এ বিষয়ে কী ভাবছে পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসন? এই বিষয়ে রবিবার কলকাতা পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্য স্বপন সমাদ্দার জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই কিছু পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে। যেমন, পুরসভা পরিচালিত বিভিন্ন জায়গায় ‘পে অ্যান্ড ইউজ’ শৌচালয়গুলিতে ভেন্ডার মেশিন রাখা আছে শহরে। সেখান থেকে প্রয়োজন মতো স্যানিটারি ন্যাপকিনও নেওয়ার ব্যবস্থা করা আছে। অনেক জায়গায় মহিলাদের জন্য আলাদা ঘরও রয়েছে। ভবিষ্যতে মহারাষ্ট্রের ধাঁচে ‘পিরিয়ড রুম’ করার‌ও পরিকল্পনা রয়েছে। উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্রী সুচেতনা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেষ্টপুর থেকে কলেজ স্ট্রিটের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে হয়। যেহেতু প্রেসিডেন্সিতে স্যানিটারি ন্যাপকিনের জন্য ভেন্ডিং মেশিন আছে, এমনকি, ব্যবহৃত ন্যাপকিন পুড়িয়ে ফেলার ব্যবস্থাও আছে। কিন্তু রাস্তায় নামলে পরিস্থিতি অন্য রকম হয়ে যায়। তাঁর মতে, ‘‘এখানে রাস্তার ধারের সাধারণ শৌচালয়গুলিতেও যদি আলাদা করে পিরিয়ড রুম করা হয়, তবে অনেকেরই সুবিধা হয় এবং বিষয়টি খুব স্বাস্থ্যকরও।’’ মহারাষ্ট্রের এই উদ্যোগকে বাহবা দিয়েছেন রাজ্যের শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী।

উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরেই কলকাতায় ‘প্যাডম্যান’ নামে পরিচিত শোভন মুখোপাধ্যায় সাধারণ শৌচালয় গুলিতে স্যানিটারি ন্যাপকিন রাখার উদ্যোগ নিয়েছেন। ওঁর মতে, ‘‘ওটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তবে কলকাতার শৌচালয়ে এমন পিরিয়ড রুম শুরু করতে গেলে আগে মানুষকে সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি, স্থানীয় প্রশাসনকেও উদ্যোগী হতে হবে। তা না-হলে রুম চালু হলেও সেটির পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা সম্ভব নয়। জেট স্প্রে, টয়লেট পেপার চুরিও হতে পারে। সে বিষয়েও শৌচালয়ের রক্ষীকে খেয়াল রাখতে হবে।’’ তবে শুধুমাত্র প্রশাসনিক স্তর থেকেই নয়, ব্যক্তিগত উদ্যোগেও অনেকে এগিয়ে এসেছেন এ রাজ্যে। রুম্পা দাস নামক দক্ষিণ ২৪ পরগণার মহেশতলা কলেজের এক অধ্যক্ষা জানিয়েছেন, তাঁর কলেজের এক শিক্ষিকা নিজের শাশুড়ির নামে একটি স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন কলেজকে দিয়েছেন। যদিও ব্যবহৃত ন্যাপকিন পোড়ানোর জন্য ইনসিনেরেটর যন্ত্র তাঁদের কলেজে বসেনি। রুম্পাদেবী আরও বলেন, ‘‘মহারাষ্ট্রের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। আমাদের রাজ্যের প্রশাসনের‌ও এমন ধরণের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। রাস্তাঘাটে ঋতুকালীন পরিস্থিতিতে সমস্যার সম্মুখীন হ‌ওয়ার কথা একমাত্র মেয়েরাই জানে।’’

Related Articles