হাথরস গণধর্ষণকাণ্ডে তোলপাড় দেশ থেকে রাজ্য। এমনকি প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। অবশেষে চাপের মুখে পড়ে কড়া ব্যবস্থা উত্তরপ্রদেশ সরকারের।সাসপেন্ড করা হল হাথরসকাণ্ডে পুলিশ সুপার-সহ আরও ৩ আধিকারিককে। দিল্লির নির্ভয়া গণধর্ষণের স্মৃতি ফের একবার উস্কে দিল উত্তরপ্রদেশের হাথরস গণধর্ষণের ঘটনা। ১৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে উত্তরপ্রদেশের গণধর্ষিতা তরুণী। কেনো বারবার গণধর্ষণের শিকার হতে হয় মেয়েদের সেই প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছে গোটা দেশ। এমনকি যোগী আদিত্যনাথের সরকার অন্যায়ের কেন প্রতিবাদ করছে না সেই প্রশ্নও উঠেছিল। তবে,মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ টুইট করে জানায় মহিলাদের সম্মানরক্ষায় দায়বদ্ধ তাঁর সরকার।
হাথরসের ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই যথেষ্ট চাপে যোগী সরকার। আর এরপরেই শুক্রবার রাতে হাথরসের পুলিশ সুপার, ডিএসপি এবং আরও দুই পুলিশকর্মীকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্তে আসে। ওই ঘটনায় গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দলের প্রাথমিক রিপোর্টের ভিত্তিতেই ওই সিদ্ধান্ত বলে খবর। সিটের প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে হাথরসের পুলিস সুপার বিক্রান্ত বীরের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। এরপরই তাঁকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। তাছাড়াও সাসপেন্ড করা হয়েছে সার্কেল অফিসার রাম শব্দ, ইনস্পেক্টর দীনেশ কুমার বর্মা, সিনিয়র সাব-ইন্সপেক্টর জগবীর সিং ও হেড কনস্টেবল মহেশ পালকে। বিরোধীদের ঠেকিয়ে রাখতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে শাসক দল। কিন্তু রাজনৈতিক রোষ ইতিমধ্যেই আছড়ে পড়েছে রাজধানী দিল্লিতে। শুক্রবার সন্ধ্যায় যন্তর মন্তর-সহ রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে নির্যাতিতা যাতে ন্যায়বিচার পান, তার জন্য রাজধানীর রাজপথে ভিড় জমাচ্ছেন শয়ে শয়ে সাধারণ মানুষ।
উল্লেখ্য, এই প্রসঙ্গে যোগী আদিত্যনাথ টুইটারে লেখেন, ‘উত্তরপ্রদেশের মা-বোনেরা সম্মানহানি করার চিন্তা রাখলেও সমূলে নাশ করা হবে। এমন শান্তি দেওয়া হবে যে নজির হয়ে থাকবে ভবিষ্যতে। আপনাদের উত্তরপ্রদেশ সরকার মা-বোনেদের সম্মানরক্ষায় সংকল্পবদ্ধ। এটা আমার সংকল্প ও প্রতিশ্রুতি’।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ সেপ্টেম্বর হাথরস এলাকায় বাড়ির কাছেই একটি জমিতে নির্যাতিতা তার মায়ের সঙ্গে জমিতে ঘাস কাটতে গিয়েছিলেন। মায়ের থেকে কিছুটা দূরে ছিলেন সে এমনটাই নির্যাতিতার পরিবার সূত্রে খবর। সেই সময় পিছন থেকে তাঁকে আক্রমণ করে কয়েক জন দুষ্কৃতী। গলায় ওড়না পেঁচিয়ে টানতে টানতে একটি বাজরা খেতের মধ্যে নিয়ে গিয়ে নৃশংস অত্যাচার চালায় ও গণধর্ষণ করে। পরে তার মা তাকে খুঁজতে এলে উদ্ধার করেন অচৈতন্য অবস্থায়।
এরপর নির্যাতিতাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে জেএনএমসি হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, ধর্ষণে বাধা দেওয়ায় নির্মম অত্যাচার চালানো হয়েছে তার উপর। প্রচণ্ড মারধর করা হয়েছে। শ্বাসরোধ করে খুনের চেষ্টাও করে দুষ্কৃতীরা। মুখের একাধিক জায়গা, জিভে কামড়ের গভীর ক্ষত। শিরদাঁড়া ও ঘাড় মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। অসাড় ছিল দুই পা এবং একটি হাত। আইসিইউ-তে রেখে সব রকম চেষ্টা চালানো হচ্ছিল তাকে বাঁচানোর। কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় সিদ্ধান্ত হয় দিল্লির হাসাপাতালে পাঠানোর, পাঠানোও হয় সেখানে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয় না। গত মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালেই মৃত্যু হয় তার। যোগী রাজ্যে এই ঘটনায় ছি ছিৎকার পরে গিয়েছে গোটা দেশ।