অফবিটআন্তর্জাতিকনিউজ

চিল শকুনে ছিঁড়ে খাক, মৃত্যুর মুখে ফেলে দিয়েছিল পরিবার, সেই শিশুটি আজ জীবনপুরের রাজপুত্র

Advertisement
Advertisement

এ যেন এক রূপ কথার গল্প, যেই গল্প একসময় উঠে এসেছিল সংবাদমাধ্যমের পর্দায়, যা দেখে চোখে জল ধরে রাখতে পারেনি গোটা বিশ্ব। একরত্তি শিশু, সে নাকি ডাইনি, আর এই অভিযোগেই তাকে জঙ্গলের এক আস্তাকুড়ে নোংরা আবর্জনার মধ্যে ফেলে দিয়ে গেছিলো তার নিজের আপনজনরা এমনকি তার মাও। সেই থেকেই কুকুর বিড়ালদের সাথেই থাকতো শিশু , খেতো কুকুর বিড়ালরাও উচ্ছিষ্ট খাবার, কারণ অতটুকু শরীরে কুকুর বিড়ালের খাবার ছিনিয়ে খাওয়ার ও যে শক্তি ছিলনা তার মধ্যে, আর তাও না জুটলে মাঝে মাঝেই থাকতো অভুক্ত।

নাইজেরিয়ার আকোয়া এবং আইবোম এই দুই রাজ্যে প্রায় ১৫০০০ শিশুকে তাদের পরিবার ডাইনি অববাদে পরিত্যাগ করেছে। যার মধ্যে ১০০০ শিশুকে নির্মভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই শিশুগুলি কে রক্ষা করার জন্য দেশ বেশ কিছু সেচ্ছাসেবী সংগঠনের টিম পাঠায় আফ্রিকায়। আর সে সময়ই একটি টিম নিয়ে নাইজেরিয়া পৌঁছেছিল এক ডেনিস সেচ্ছাসেবী আনজা রিংগ্রেন লোভেন। সঙ্গে ছিলেন স্বামী ডেনিস ইমানুয়েল উমেন যিনি ছিলেন একজন প্রবাসী নাইজেরিয়ান। আর সেই সময়ই লোভেনের চোখে পড়ে সেই অর্ধ কঙ্কালসার মৃতপ্রায় শিশুটি, যাকে তার নিজের মা অশুভ বলে ফেলে গেছিলো চিল শকুনের খাদ্য হিসেবে।

এক বছর ধরে জীবন সংগ্রামে লড়ে একপ্রকার হারতে বসেছিল শিশুটি। খোলা আকাশের নিচে উচ্ছিষ্ট খেয়ে কোনো মতে কাটিয়ে দিয়েছে একটা বছর, কারোর হয়তো একটু মায়া লাগায় চুপিসারে দিয়ে গেছে একটা পাতলা নোংরা কম্বল, আর সেই নোংরা ভিজে কম্বলেই শিশুটি কাটিয়ে দিয়েছে নাইজেরিয়ার কনকনে গোটা একটা শীত।

লোভেন ছুটে গিয়েছিল শিশুটির কাছে, জলের বোতল তুলে ধরেছিলো শিশুটির মুখে। বিস্কুটের প্যাকেট থেকে খেতে দিয়েছিল বিস্কুট। লোভেন বুঝতে পেরেছিল এইভাবে থাকলে আর বেশিদিন বাঁচবে না শিশুটি। দূষিত জল এবং নোংরা খাবার খাওয়ার ফলে শিশুটির শরীরে বাসা বেঁধেছিল একাধিক রোগ। সারা শরীরে ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকঘটিত ইনফেকশন। শিশুটিকে কীটনাশক সাবান দিয়ে স্নান করিয়ে কোলে করে গাড়িতে তুলে নেন লোভেন। মাতৃহীন শিশুটি যেন সেদিন প্রথম পেয়েছিলো মায়ের স্পর্শ। সেদিন সেই ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়া দ্বারা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের নানা প্রান্তে।

সকলেই লোভেনের টিম কে সাধুবাদ জানায়। শিশুটিকে গাড়িতে তুলে লোভেন যখন এলাকা ছাড়ছিল, প্রত্যকেই চাইছিল তাড়াতাড়ি বিদায় হোক অশুভ শিশুটি। সকলেই চেয়েছিল শিশুটি যেন না বাঁচে, তবে লোভেন এবং তার টিম চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলো শিশু টিকে বাঁচানোর। শিশুটিকে নিয়ে লোভেন এসেছিল তাদের কেয়ার সেন্টারে। তার নাম রাখা হয় হোপ অর্থাৎ আশা। শিশুটির জন্য দেশ বিদেশ থেকে আসতে থাকে আর্থিক অনুদান। লোভেনের যত্নে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে শিশুটি। নির্মম ভাবে যেই শিশুর অঘোষিত মৃত্যুদন্ড লিখে দিয়েছিল সমাজ এমনকি তার মাও, সেই শিশুকে নিজের ভালোবাসা যত্ন দিয়ে মাত্র আট মাসের মধ্যেই পুরোপুরি সারিয়ে তোলে লোভেন।

শিশুটি উদ্ধারের ঠিক এক বছর পর দুটি ছবি একসাথে কোলাজ করে পোস্ট করেন লোভেন, একটিতে কঙ্কালসার হোপ কে একবছর আগে জল খাওয়াচ্ছেন লোভেন, অন্যটিতে লাল স্কুল ড্রেস স্নিকাস পড়ে পিঠে ব্যাগ নিয়ে হোপ, সেদিনই প্রথম স্কুল যাচ্ছিলো সে, এই ছবিটিতেও তাকে জল খাইয়ে দিচ্ছে লোভেন। ছবি দুটি দেখে রীতিমত তাজ্জব হয়ে গেছিলেন সকলে। বিশ্বের নানা জায়গা থেকে আসা হোপ এর জন্য অনুদানের টাকা দিয়ে ইকেত নামের এক জায়গা বানিয়েছেন লোভেন। যেটি ডাইনি অপবাদ দিয়ে পরিবারের ফেলে দেওয়া শিশুদের শেল্টার। সেখানে তারা মহা আনন্দে থাকে। আর হোপ? সে এখন সকলের ভালোবাসা পেয়ে খুব তাড়াতাড়ি বড়ো হয়ে উঠছে, সম্প্রতি ১০০ মিটারের রেসে জিতেছে সে, নিজের ফেসবুকে লোভেন জানিয়েছেন সেই কথা, হোপের মধ্যে লোভেন একজন ভবিষ্যতের অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন কে দেখতে পাচ্ছেন।

Web Desk

We belong to that group who are addicted to journalism. Behind us, there is no big business organization to support us. Our pens do not flow under any other’s commands.

Related Articles