বিধানসভা ভোটযুদ্ধের দামামা বেজে গেছে এই রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে। আসন পুনর্দখল অথবা নতুন ভাবে জয়ী হতে সব রাজনৈতিক দলগুলিই রাজনৈতিক প্রকৌশল তৈরি করছে। তারই মধ্যে সোমবার অর্থাৎ গতকাল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তিনি নিজে প্রার্থী হবেন নন্দীগ্রামে। এই ঘোষণার ফলে গেরুয়া শিবিরের সমস্ত রাজনৈতিক হিসেব কার্যত গোলমাল হয়ে গেল। রাজনৈতিক জল্পনার কেন্দ্রবিন্দু নন্দীগ্রাম থেকে স্বয়ং মূখ্যমন্ত্রী দাঁড়াতে পারেন, তা ভাবনার ঊর্ধ্বে ছিল সকলের। এটা বিধানসভা নির্বাচনের আগে নিঃসন্দেহে মাস্টারস্ট্রোক তৃণমূলের। কিন্তু শুভেন্দু অধিকারীর চ্যালেঞ্জকে জবাব দিতে মুখ্যমন্ত্রীকে নামতে হওয়ায় দলের বাকিদের যোগ্যতাও প্রশ্নের মুখে।
এই প্রশ্ন উঠেছে ইতিমধ্যেই, তৃণমূল কংগ্রেসে কি এমন কেউ নেই যে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে টক্কর দেবে? যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখানকার ভূমিকন্যা নন, এবং এই আসন থেকে শুভেন্দু অধিকারী প্রার্থী হবেন কি না, তা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বিজেপি থেকে।
প্রশ্ন উঠছে, তবে কেন মুখ্যমন্ত্রী এই আসনে প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াবেন? তৃণমূল কংগ্রেস সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন আগেই শুভেন্দু চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে জানিয়েছিলেন, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে ৩৫ টি আসনের মধ্যে ৩৫ টি-তেই গোহারা হারাবেন। এর পরই তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সমীক্ষা করা হয়, এবং জানা যায় এখান থেকে বেশি আসন বের করা কঠিন। তখন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর এই নয়া বিকল্প পথের কথা তুলে ধরেন। আর এই পরিকল্পনার কথাই আজ প্রকাশ্যে বলে দিয়ে মানুষের মন জয় করতে চাইলেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী৷ যদিও, প্রশ্ন উঠছে, শুভেন্দুকে হারাতে যদি স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মাঠে নামতে হয়, তাহলে শিশির অধিকারী প্রার্থী হলে তিনি কাকে প্রার্থী করতেন?
পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট কমে গিয়েছিল খোদ ভবানীপুরেই, যেটি মুখ্যমন্ত্রীর গড় হিসেবে পরিচিত। এবার বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেস-এর লড়াইটা কার্যত কঠিন। এর ফলে ভবানীপুরেও ভোট কমতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। তবে এটা বলা যেতেই পারে, নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী হওয়ায় মেদিনীপুরের ভোট উত্তেজনা চরমে পৌঁছবে।