দেশনিউজ

রবীন্দ্রনাথের জাতীয় সঙ্গীত বদলাতে চান বিজেপি সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী!

Advertisement
Advertisement

রাস্তা, শহরের পর এবার পালা জাতীয় সংগীতের। বিভিন্ন রাস্তা ও শহরের নাম বদলের পর এবার দাবি উঠলো রবীন্দ্রনাথের লেখা দেশের জাতীয় সঙ্গীতই বদলে ফেলার। এই বদল চেয়েছেন বিজেপির সাংসদ তথা অন্যতম নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকেও চিঠি লিখেছেন তিনি। এই নিয়ে রীতিমতো উৎফুল্ল স্বামী নিজের ট্যুইটার অ্যাকাউন্টে জানিয়েছেন এ কথা। আর এরপর এই ঘটনা নিয়েই শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক।

রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন লেখা নিয়ে এমনিতেই সঙ্ঘের নানা সময়ে আপত্তির কথা শোনা যায়। এর আগে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পরে সঙ্ঘের শিক্ষা সেলের নেতা দীননাথ বাত্রা এনসিইআরটি-র পাঠ্যক্রম থেকে রবীন্দ্রনাথের লেখা বাদ দেওয়ার সুপারিশও করেন। অবশ্যএই মুহূর্তে বাংলার বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে বিজেপি। বাঙালীর মন ভোলাতে গত দু’বছরে নানা সময় রবীন্দ্রনাথের নানা কবিতা আবৃত্তি করেছেন মোদী ও বিজেপি নেতারা। ‘বহিরাগত’ প্রচারের বিরুদ্ধে তাঁর দলের অন্য নেতারাও বাংলায় এসে রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর লেখাকে স্মরণ করতে ভোলেন না। সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর ট্যুইট এবার নতুন বিতর্ক উস্কে দিল। ‘জন গণ মন’ নিয়ে সুব্রহ্মণ্যমের আপত্তি কেন? তাঁর আপত্তির অন্যতম শব্দটি হল জাতীয় সঙ্গীতে ব্যবহৃত ‘সিন্ধু’ শব্দটি। স্বামীর মতে, বর্তমান জাতীয় সঙ্গীতের কিছু কিছু শব্দ (সিন্ধু) অনাবশ্যক ধন্দ তৈরি করে। বিশেষ করে স্বাধীনতা-পরবর্তী পরিপ্রেক্ষিতে। তাঁর আরোও দাবি, শুধু তাঁর নয়, ‘দেশের যুব সমাজের বড় অংশের মনের কথা’ বলছেন তিনি। রবীন্দ্রনাথের ‘জন গণ মন’ বদলে নেতাজির অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় সঙ্গীত ‘কাওয়ামি তারানা’র প্রথম পংক্তি ‘শুভ সুখ চ্যান’ গানটি ব্যবহারের পক্ষে সওয়াল করেছেন তিনি। তাঁর সওয়ালের পক্ষে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদের একটি বক্তব্যের উল্লেখ করেছেন স্বামী। ১৯৪৯ সালে রাজেন্দ্র প্রসাদ বলেছিলেন, জাতীয় সঙ্গীতের শব্দ পরিবর্তন বা সংশোধন করা যেতে পারে।

ইতিহাস বলছে, ১৯৪৩-এ নেতাজীর নির্দেশে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির দুই সদস্য মুমতাজ হোসেন এবং কর্নেল আবিদ হাসান সাফরানি গানটি লিখেছিলেন। ‘জন গণ মন’র আদলে লেখা গানটিতে সুর দিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন রাম সিংহ ঠাকুর। ‘জন গণ মন’-র প্রথম অংশটি জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গাওয়া হয় এবং সময় লাগে ৫২ সেকেন্ড। অন্যদিকে আইএনএ-র ‘কাওয়ামি তারানা’র প্রথম অংশটি গাইতে ৫৫ সেকেন্ড সময় লাগে।

কিন্তু জাতীয় সঙ্গীত বদলেও স্বামীর সমস্যা মিটবে কী? যে শব্দটি নিয়ে প্রবীণ সাংসদের আপত্তি, সেই ‘সিন্ধু’ শব্দটির উল্লেখ আইএনএ-র গাওয়া গানেও রয়েছে। তা ছাড়া, আরএসএসের আগাগোড়া অখণ্ড ভারতের তত্ত্বের প্রাচারক। ‘সিন্ধু’ শব্দটি বাদ দিলেই যে প্রচারই প্রশ্নের মুখে পড়ে যায়। বিজেপি সাংসদ হলেও স্বামী কি তা হলে সঙ্ঘের তত্ত্বকেই আঘাত করলেন, সে প্রশ্নও উঠছে। অবশ্য স্বামী চিরকালই এসবের ধার ধারেন না। তিনি আশা করেছেন সামনের বছর ২৩ শে জানুয়ারির মধ্যেই প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করবে নরেন্দ্র মোদী সরকার। কিন্তু আগামী বছরেই যে বাংলার ভোট! তার আগে রবীন্দ্রনাথের লেখা দেশের জাতীয় সঙ্গীত বদলের ঝুঁকি নিয়ে বাঙালীর ভাবাবেগে আঘাত দিয়ে কি নিজেদের ভোট ব্যাংকে আঘাত করতে চাইবে জিততে মরিয়া বিজেপি? ফোকাস থাকবে সেদিকেই।

Related Articles