নিউজরাজ্য

স্বাস্থ‍্যসাথী কার্ড দেখেই রোগী ফেরাল নার্সিংহোম, বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু অসহায় প্রৌঢ়ের

Advertisement
Advertisement

ফের বিতর্কের ঘটনা স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রীর চালু করা স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে চিকিৎসা করাতে গিয়ে মিলল না পরিষেবা। চিকিৎসা না করে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ ফিরিয়ে দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হল মহম্মদ গফ্ফর নামে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের মাটিগাড়ার প্রমোদ নগরের এক বাসিন্দার।

মহম্মদ গফ্ফরের মেয়ে আলেমা খাতুন জানালেন, গত মাসে ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির থেকে অনেক ঝক্কি পোহানোর পর নিজের ও পরিবারের জন্য স্বাস্থ্যসাথী কার্ড পেয়েছিলেন তাঁর বাবা। পেশায় টোটোচালক গফ্ফর সাহেবের আশা ছিল, এই কার্ডের মাধ্যমে বেসরকারি ক্ষেত্রেও সুচিকিৎসার সুযোগ পাবেন তাঁরা। কিন্তু বাস্তব চিত্রটা অন্যরকম হয়ে দাঁড়ায়। ৬৫ বছর বয়সী মহম্মদ গফ্ফর চলতি সপ্তাহে ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। তাঁর পরিবার তাঁকে নিয়ে প্রথমে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ছুটে গেলেও সেখানে নিউরো সার্জেন না থাকার কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় যে এই রোগের চিকিৎসা সরকারি হাসপাতালে করা সম্ভব নয়। যেতে হবে বেসরকারী নার্সিং হোমে। এরপরই স্বাস্থ্যসাথীর তালিকাভুক্ত শিলিগুড়ির বিভিন্ন নার্সিংহোমে চিকিৎসার সুযোগ খুঁজতে থাকেন তাঁরা। সাথে ছিল স্বাস্থ্যসাথী কার্ড। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেখে প্রতিটি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষই তাঁদের পরিষেবা দেওয়া এড়িয়ে যায়। নার্সিংহোমগুলি অজুহাত দেয়, “এই রোগের চিকিৎসা করার মত চিকিৎসক এখানে নেই।”

বেসরকারি নার্সিংহোমগুলিতে চিকিৎসা পরিষেবা না পেয়ে হতাশ হয়ে ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীকে বাড়িতে নিয়ে আসেন তাঁর পরিবার। এরপর বৃহস্পতিবার কার্যত বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয় ওই রোগীর। এই ঘটনার পরে বেজায় ক্ষুব্ধ মৃত রোগীর পরিবার প্রশ্ন তুলেছেন স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের যৌক্তিকতা নিয়ে। তাঁদের প্রশ্ন, কার্ড দেওয়া হলেও তারপর পরিষেবা দেওয়ার পরিকাঠামো নেই কেন? স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে চিকিৎসা না পাওয়ার ঘটনা জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাক্তার প্রলয় আচার্য্যকে জানানো হলে বিস্ময় প্রকাশ করে বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

ক’দিন আগে রানাঘাটের জনসভা থেকে জেলার ছোট ছোট নার্সিংহোমগুলি স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে চিকিৎসা পরিষেবা না দিলে তাদের লাইসেন্স বাতিলের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প চালু করতে নিমরাজি বড় বড় হাসপাতালগুলির সাথে মিটিংয়ে বসার কথাও বলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প চালু করতেই হবে। এরপরেও কেউ চিকিৎসা না দিলে সরকারের হাতে তাদের লাইসেন্স বাতিল করার ক্ষমতা আছে।” কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণাই যে সার, তার প্রমাণ শিলিগুড়ির এই ঘটনা। এই ঘটনা প্রসঙ্গে রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে নথিবদ্ধ নার্সিংহোমগুলিকে পরিষেবা দিতেই হবে। চিকিৎসা পরিষেবা না দেওয়ার এমন অভিযোগ এলে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশানুসারে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেব আমরা৷”

Related Articles