কলকাতানিউজরাজ্য

‘তোমার মতো ছেলেদের‌ই দরকার’, মমতার এক ফোনে বিলেতে মোটা অঙ্কের চাকরি ছাড়লেন চিকিৎসক

Advertisement
Advertisement

করোনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে পৃথিবীতে ভগবানের স্বরূপ হলেন ডাক্তার, নার্স আর ফ্রন্ট লাইন ওয়ারিওর্সরা। করোনা চিকিৎসায় তাদের অবদান তো ভুলবার নয়। সেরকমই অন্য এক ডাক্তারের কথা আজ। ডা. কৌশিক মজুমদার। বিলেতের মোটা মাইনের চাকরি ছেড়ে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসক হিসাবে কাজ শুরু করলেন বয়স্করোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মজুমদার।

নামের পাশে ডিগ্রীর ভার এমন কিছু কম না; এমআরসিপি, এফআরসিপি, এই জেরিয়াট্রিশিয়ান এখন নিয়ম করে রোগী দেখছেন সল্টলেকে। এই ‘নামী’ ডাক্তারবাবুকে দেখানোর গাঁট থেকে অগাধ খরচের প্রয়োজন পড়ে না। মাত্র ২ টাকা আউটডোর ভিজিটে রুগী দেখলেও কোনও আক্ষেপ নেই ডাক্তারবাবুর। বরং মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর উৎসাহে কৌশিকবাবুর স্বপ্ন বিধাননগর হাসপাতালকে বয়স্করোগ চিকিৎসার উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা। আদতে বাগবাজারের বাসিন্দা ডা। মজুমদার অতিমারির সময় থেকেই তিনি ফ্রন্ট লাইনে। একটা সময় নিজেও আক্রান্ত হয়েছেন, সেরে উঠে আবার সামিল হয়েছেন ফ্রন্ট লাইন ওয়ারে।

অফার লেটার হাতে পাওয়ার পর ফোন পান খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যাইয়ের কাছ থেকে; “তোমার মতো বিলেত ফেরত ছেলেদের আমার দরকার। বিধাননগরে একটা ব্যবস্থা করলাম। পরে একবার দেখা কোরো।”। বিলেতের বহু গণ্যমান্য সিনিয়র সিটিজেনের চিকিৎসক কৌশিকবাবু জানান, “১৯৯৮ থেকে ২০০৭, টানা লন্ডনে চাকরি করেছি। তারপর লন্ডন-কলকাতা হত। নিজের রাজ্যে মানুষদের সেবায় সরাসরি যুক্ত হওয়ার ইচ্ছে ছিল। লন্ডনের ইলিং হাসপাতালের চাকরি ছেড়ে দেশে ফেরার পর দু’-একজন বন্ধুকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু ভাবতে পারিনি, মুখ্যমন্ত্রী নিজে আমায় ফোন করে এভাবে চাকরি দেবেন!” নভেম্বরে লন্ডনে গিয়ে ডা. মজুমদারের ফের চাকরিতে জয়েন করার কথা ছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে নিয়োগপত্র পাওয়ার পর ফিরে যাচ্ছেন না তিনি। এখন বাংলায় থেকেই বয়স্ক মানুষদের চিকিৎসা করতেই আগ্রহী ডাক্তারবাবু।

শুধুমাত্র ডা. মজুমদার নন, কমিউনিটি মেডিসিনে “ডক্টর অব মেডিসিন” আরোও কয়েকজন ডাক্তারবাবুও মেডিক্যাল কলেজগুলিতে যোগদানের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তাদের বক্তব্য, কোভিড পর্বে দেশ-বিদেশের প্রশংসা কুড়িয়ে নিয়েছে এ রাজ্যের চিকিৎসা পদ্ধতি। কাজের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। চালু হয়েছে সকলের জন্য ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পও। উল্লেখ্য, পশিমবঙ্গে বেসরকারী ক্ষেত্রে হাতে গোনা কয়েকজন প্রথম জেরিয়াট্রিশিয়ান রইলেও সরকারি ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে কৌশিকবাবুই সেই অর্থে প্রথম। এত বড় বড় ডিগ্রী নিয়ে মহকুমা হাসপাতালে চাকরির সিদ্ধান্ত, তাও আবার নামমাত্র বেতনে সহজ ছিল না। তাছাড়া এখানে রোগী মানে সেই সাধারণ মানুষই। কিন্তু কৌশিকবাবুর কথায়, “টাকাই সব নয়। মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় নিজের রাজ্যের মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ পেয়ে লন্ডন যাই কী করে?”

রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. অজয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “কোভিড পর্বে অনেক ডাক্তারই দেশে ফিরে সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবায় যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। কৌশিকবাবু বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে যোগ দিয়েছেন। সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়া একজন অ্যানেস্থেটিস্ট এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিযুক্ত হয়েছেন। আরও একজন যোগ দেবেন।”

Related Articles