দেশনিউজ

অভাবের তাড়নায় রাস্তায় ঘুরে চুড়ি বিক্রি, বহু বঞ্চনা সহ্য করে আজ IAS অফিসার রমেশ বাবু

Advertisement
Advertisement

রাতে পড়াশোনা করতেন কেরোসিনের মৃদু আলোয়, সারা দিনের পরিশ্রমের পর। উপায় ছিল না রাত জেগে পড়ার, ইচ্ছা থাকলেও। কেরোসিনের আলো সঙ্গ দিত না বেশিক্ষণ। গ্রামে গ্রামে চুড়ি ফেরি করা শুরু হত পরদিন সকালে দিনের আলো ফুটলেই। পোলিওয় আক্রান্ত একটি পা। সেই নিয়েই গ্রামে গ্রামে চুড়ি ফেরি করে বেড়াতেন তিনি মায়ের হাত ধরে। আইএএস অফিসার হয়ে উঠলেন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সেই ফেরিওয়ালাই। তিনি রমেশ ঘোলাপ, ২০১২ ব্যাচের আইএএস অফিসার। এখন জয়েন্ট সেক্রেটারি হিসাবে কর্মরত ঝাড়খণ্ডের এনার্জি ডিপার্টমেন্ট-এ।

রমেশ ছোটোবেলা থেকেই জীবনের অনেক ওঠাপড়া দেখেছেন। কিন্তু তাঁকে লক্ষ্য থেকে সরাতে পারেনি সেগুলোর কোনোটাই। একটি সাইকেল মেরামতির দোকান চালাতেন রমেশের বাবা গোরাখ ঘোলাপ। ৪ জনের পরিবারে কোনও মতে খাবার জুটে যেত সেই উপার্জন দিয়ে। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর পরিবারে ঝড় নেমে আসে। তখন স্কুলে পড়তেন রমেশ। অত্যধিক মদ্যপান থেকেই অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর বাবার। বাধ্য হয়ে রমেশ সেই থেকেই মায়ের হাত ধরে চুড়ি বিক্রি করতে শুরু করেন। রোজ সেগুলো বেচতেন আশেপাশের গ্রামে দিনভর ঘুরে। রমেশের বাঁ পা পোলিওয় আক্রান্ত হওয়ায় হাঁটাও সমস্যা ছিল তার কাছে। তা সত্ত্বেও রোজ চুড়ি বেচতে যেতেন মায়ের সঙ্গে।

রমেশের পরিবার থাকত মহারাষ্ট্রের সোলাপুর জেলার মহাগাঁওয়ে। সেখানে মাকে সাহায্য করার পাশাপাশি একমাত্র প্রাইমারি স্কুলে পড়াশোনাও চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। ২০০৯ সালে তিনি কলাবিদ্যায় স্নাতক হন একটি ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে। তার পর শিক্ষকতা শুরু করেন একটি স্কুলে। কলেজ জীবন থেকে শুরু হয় রমেশের আইএএস হওয়ার ইচ্ছা। এক তহশিলদারের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়েছিল কলেজে পড়ার সময়, তাঁর থেকেই আইএএস হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন।

কিন্তু চাকরি করে প্রস্তুতি নিতে পারছিলেন না তিনি এই কঠিন পড়াশোনার জন্য, প্রয়োজন ছিল অনেকটা সময়ের। স্বনির্ভর প্রকল্পের আওতায় ব্যবসার জন্য ঋণ নেন তাঁর মা। চাকরি ছেড়ে এরপরই পুরোপুরি ইউপিএসসি-র পড়াশোনার প্রস্তুতি শুরু করে দেন রমেশ পুণে গিয়ে। ২০১০ সালে তিনি প্রথমবার পরীক্ষায় বসে উত্তীর্ণ হতে না পারলেও স্টেট ইনস্টিটিউট অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কেরিয়ার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ফলে পড়াশোনার জন্য স্কলারশিপ ও থাকার হস্টেল পান। তিনি পোস্টার রং করতেন নিজের দৈনন্দিন খরচাপাতি তোলার জন্য। অবশেষে সফল হন ২০১২ সালের আইএএস পরীক্ষায়। এর কয়েক মাস পরেই মহারাষ্ট্র পাবলিক সার্ভিস কমিশন’র পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন তিনি। তাঁর দৃঢ় চেতনা আর্থিক সমস্যা, শারীরিক বাধা সব কিছুকেই ছাপিয়ে গিয়েছে। আজ তিনি আইএএস অফিসার সেই চেতনায় ভর করেই।

Related Articles