নিউজরাজনীতিরাজ্য

“কৃষি গৌরব, শিল্প সম্পদ”, ভোটের আগে শিল্পায়নের বড় ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

Advertisement
Advertisement

২০১১ সালে ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ক্ষমতায় এসেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও তাঁর জয়ের অন্যতম অনুঘটক ছিল সিঙ্গুরের কৃষি ও শিল্পবিরোধী আন্দোলন। বিধানসভা ভোটের আগে সেই সিঙ্গুরই কি হবে আবারও তুরুপের তাস? সিঙ্গুরে ব্রাত্য জমিতে শিল্প গড়ে তোলার দাবিতে ইতিমধ্যেই সরব দুই রাজনৈতিক দল, বিজেপি ও সিপিএম। আসন্ন বিধানসভা ভোটে সিঙ্গুরে শিল্পের দাবিই সম্ভবত হতে চলেছে বিরোধীদের প্রচারের মূল অভিমুখ।

সেই ঐতিহাসিক সিঙ্গুরের সভাতেই বৃহস্পতিবার অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক গড়ে তোলার ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, “কৃষি আমাদের গৌরব, শিল্প সম্পদ।” মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “সিঙ্গুরে অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক তৈরি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেখানকার জমি সুজলা, সুফলা। ১১ একর জমির উপরে পার্ক তৈরি করা হবে। পশ্চিমবঙ্গ ক্ষুদ্রশিল্প উন্নয়ন নিগম এই দায়িত্ব নিয়েছে। সিঙ্গুর রেলস্টেশনের কাছে জমি জরিপ এবং ঘিরে দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। ইচ্ছুক শিল্পপতিদের এখনো পর্যন্ত ১০ থেকে ৩০ কাটার প্লট দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত করা হয়েছে। যদিও বড় প্লটও থাকছে। শিল্পপতিদের পরিকল্পনা অনুযায়ীও আমরা এগোতে পারি।”

সিঙ্গুরের কৃষকদের পাশেই তাঁর সরকার প্রথম থেকেই সক্রিয় ভাবে রয়েছে বলেও মনে করিয়ে দেন মমতা। তিনি জানান, “সিঙ্গুরের চাষীদের জমি ফেরত দেওয়া হয়েছে। চাষীদের সম্ভবত দুই বা আড়াই হাজার টাকা প্রতি মাসে ভাতা দিই। বিনা পয়সায় চালও দেওয়া হয় তাদের।” কোভিড পরিস্থিতির জন্যই বিনিয়োগে সমস্যা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন মমতা। তিনি বলেন, “ফোর্ডকে বলা হয়েছিলো, নবদ্বীপে কারখানা করার কথা। যদিও, এখন করোনা পরিস্থিতিতে গোটা বিশ্বেই বিনিয়োগ স্তব্ধ হয়ে আছে। তবে একদিন না একদিন ঠিকই সব স্বাভাবিক হবে।”

গত লোকসভা ভোটে হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। এই হুগলি লোকসভা কেন্দ্রেই সিঙ্গুরের রক্তক্ষয়ী আন্দোলনকে হাতিয়ার করে ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বামফ্রন্ট সরকারের সাংসদ রূপচাঁদ পালকে হারিয়েছিলেন তৃণমূলের রত্না দে নাগ। ঠিক তারই ১০ বছর পরে পালটে গেলো তাস। সিঙ্গুর বিধানসভায় তৃণমূলের চেয়ে ১০, ৪২৯ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে জয়লাভ করেছিলো বিজেপি। এমনকি টাটাদের জমি যে বিতর্কিত মৌজাগুলিতে ছিল, সেখানেও বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে। সিঙ্গুরে শিল্প গড়ার দাবিতে যেমন পথে নেমেছিলেন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, পিছিয়ে ছিলো না সিপিএমও। তাদের ছাত্র ও যুব সংগঠন গুলিও শিল্পের দাবি নিয়ে আন্দোলনের ঝড় তুলেছে।

রাজনৈতিক মহলের তরজা অনুযায়ী, আগামী বিধানসভা ভোটে সিঙ্গুরে শিল্পের প্রতিশ্রুতিই হতে চলেছে প্রধান বিরোধী দল বিজেপির আসার অস্ত্র। সম্ভবত সেটা আঁচ করেই এই ঘোষণা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। শ্যাম ও কূল-দুই-ই রক্ষা হলো তাঁর। জোর করে কৃষি জমি অধিগ্রহণ না করেই ফাঁকা জমিতে শিল্প গড়ে তোলার মতো কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিলেন তিনি।

Related Articles