দেশে করোনা প্রতিরোধে কি কি ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার! ভারতীয় হিসাবে জানা আবশ্যিক

দেবপ্রিয়া সরকার : চীনের উহান শহর থেকে গত বছর ডিসেম্বর মাসে যে মারণ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটিয়েছিল বর্তমানে তা সারা বিশ্বজুড়ে তান্ডব করে বেড়াচ্ছে। ভারতও বাদ যায়নি এই ভাইরাসের কবল থেকে। একের পর এক মানুষের প্রাণ নিয়েছে এই ভাইরাস। করোনা ভাইরাস এই দেশে এখনো পর্যন্ত ৪১৪ জন মানুষের প্রাণ কেড়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যু হয়েছে ৩৭ জনের। আক্রান্তের সংখ্যা ১২,৩৮০। ইতিমধ্যে করোনা সংক্রমণে স্পর্শকাতর এলাকা হিসেবে দেশের ৬৪০ জেলার মধ্যে ১৭০ টি জেলাকে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করে সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে। দেশের ১২৩ টি জেলা অতি সংক্রামিত তালিকার মধ্যে রয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে দিল্লির ৯ টি জেলা। এছাড়া কলকাতা, মুম্বই, বেঙ্গালুরু গ্রামীণ, হায়দরাবাদ, চেন্নাই, জয়পুর, এবং আগ্রার বিভিন্ন অংশও এর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ৬ টি বড় বড় মেট্রো শহরও হটস্পট এর মধ্যে পড়েছে। দেশের যে সমস্ত জেলায় বেশি সংক্রামিত হয়েছে সেখানে ৪ দিনে দ্বিগুণ হয়েছে সংক্রমনের হার। হস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা এলাকাগুলি ২৮ দিনের জন্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ওই এলাকা থেকে কেউ বাইরে বেরোতে বা ওই এলাকার মধ্যে কেউ ঢুকতে পারবে না। ওই হটস্পট অঞ্চল গুলিতে বিশেষ দল থাকবে। সেই দলগুলি কোন সন্দেহভাজন ব্যক্তি দেখলেই তাদের করোনা পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাবে।
তবে শুধু করোনা সন্দেহভাজন ব্যক্তিই নয়, ইনফ্লুয়েঞ্জার চিহ্ন থাকা ব্যক্তি অথবা কারও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকলেও তাঁদের করোনা পরীক্ষা করা হবে। রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কোথায় সংক্রমণ বাড়ছে সে দিকে খেয়াল রাখতে। রাজ্যের রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তীতে হটস্পট এর তালিকা বদল করা যেতে পারে। যে যে এলাকাগুলোতে কোন সংক্রমণ ছড়ায়নি সেই এলাকার সাধারণ জীবনযাপনের কিছু ক্ষেত্র লকডাউন আওতার বাইরে রাখা হবে। তবে সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে তা করা হবে। প্রথম ধাপের লকডাউন চলেছে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। এরপর থেকে দ্বিতীয় ধাপের লকডাউন শুরু হয়েছে যা প্রথমে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ঘোষণা করা হলেও পরে মেয়াদ বৃদ্ধি করে ৩ রা মে করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের লকডাউনে সামাজিক ক্ষেত্রে অনেক ছাড় দেওয়া হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্র চালু রাখার কথা বলা হয়েছে।
২০ এপ্রিল থেকে যথাযথভাবে ছাড় দেওয়া হবে আইটি, ই-কমার্স ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় পরিবহণের ক্ষেত্রে। এছাড়া ছাড় থাকছে কৃষিকাজ ও কৃষি বিপণন এবং তার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য কাজ, নির্দিষ্ট কিছু শিল্প ও ডিজিটাল অর্থনীতিতে। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সাধারণ পণ্য দুটির পরিবহণেই ছাড় পাওয়া যাবে। নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্য যেমন, মাছ, দুধ, দুগ্ধজাত পণ্য, হাঁস-মুরগি পরিবহণ ও বিক্রিতে কোনো বাধা থাকবে না। চা, কফির উৎপাদন, সরবরাহ এবং রবার বাগানের কাজকেও লকডাউনের আওতার বাইরে রাখা হচ্ছে। গ্রামীণ অঞ্চলে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের কাজ এবং গ্রামাঞ্চলে রাস্তা, সেচ প্রকল্প, ভবন, শিল্প প্রকল্প নির্মাণের কাজেও মিলবে ছাড়। ডেটা ও কল সেন্টার গুলো খোলা রাখা যাবে ২০ এপ্রিল থেকে। অন্যদিকে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে বিমান, রেল ও সড়ক পরিবহণ ব্যবস্থা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বড় শিল্প ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমগুলোও বন্ধ থাকবে। এছাড়া বন্ধ রাখতে হবে হোটেল সংক্রান্ত ব্যবসা, সিনেমা হল, থিয়েটার, শপিং কমপ্লেক্সগুলোও। লকডাউন চলা পর্যন্ত যে কোনও ধরণের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অন্যান্য অনুষ্ঠান বন্ধ করা যাবেনা। বন্ধ থাকবে ধর্মীয় স্থানগুলোও।