সমাজের এখনও কিছু মানুষ মনে করে মেয়েরা সমাজের বোঝা। বয়স হতে না হতেই বিয়ে দিয়ে পরের ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আদতে সেই মেয়েটির বিয়ে করার জন্য প্রস্তুত কিনা তা খতিয়ে দেখে না পরিবার। তবে তথাকথিত সমাজের এই ভুল ধারণা বদলাতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। এতদিন মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার জন্য বয়স ছিল ১৮ বছর। ১৮ বছরকে বিয়ের সঠিক বয়স মনে করছে না সরকার। আরও তিন বছর বাড়িয়ে বিয়ের বয়স কথা ভাবছে সরকার লালকেল্লা থেকে এমনটাই ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির।
এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জানান, মেয়েদের বিয়ের বয়স নিয়ে পুনর্বিবেচনা করছেন তারা। তার জন্য দেশরে সমীক্ষা চলছে গঠন করা হয়েছে কমিটি। যদিও ২০১৮ সালে আইন কমিশন অনুযায়ী, নারী পুরুষ, ধর্ম নির্বিশেষে বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ হওয়া উচিত। তবে, এখন মেয়েদের বিয়ের বয়স তিন বছর বাড়িয়ে দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার। কিন্তু এতে কতটা লাভ হবে এই নিয়ে কি ভাবছেন বিশেষজ্ঞরা আসুন দেখে নেওয়া যাক।
এই প্রসঙ্গে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ সুষুপ্তা চৌধুরী মেয়েদের বিয়ের বয়স বৃদ্ধির প্রসঙ্গে বলেন, ‘অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়াতে অনেক সময় সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মেয়েরা অপুষ্টির শিকার হয়। অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়াতে মানসিকভাবেও একটি মেয়ে শিশুর দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয় না ফলে সে হাইপারটেনশন, প্রেগনেন্সির পর নানান সমস্যায় ভোগে।গ্রামের দিকে অল্প বয়সী মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হয়। ফলে টিন এজ প্রেগনেন্সির হার বেশি, তখনও একটি মেয়ের শরীর পূর্ণতা পায় না। আর অল্প বয়সে গর্ভবতী হলে মা ও শিশু দুজনেরই শারীরিক জটিলতা বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে। ২১-এ যদি তার বিয়ে হয়, ২২ বা ২৩ বছরে মা হয়, তবে তার শারীরিক বৃদ্ধি ততদিনে সম্পূর্ণ, তার সন্তান জন্মের জটিলতা কম হবে, সুস্থ থাকবে শিশুও।
অন্যদিকে, আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘ যদি কোনও পরিবারকে ১৮-র পর আরও ৩ বছর মেয়ের দায়িত্ব নিতে হয়, তবে তার প্রতি নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে পারে। তাঁর মতে, এর ফলে পালিয়ে গিয়ে, লুকিয়ে বিয়ে করা বা বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা বাড়বে, বাড়বে নারী পাচার। জাল বার্থ সার্টিফিকেট বার করে বিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও বাড়বে। কারণ দেশের একটা বিরাট সংখ্যক মানুষ আর্থিকভাবে পিছিয়ে, মূলত আর্থিক কারণেই তাঁরা মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দেন। পশ্চিমবঙ্গেও নাবালিকা বিবাহের একাধিক ঘটনা আমরা দেখেছি। এখনও মেয়েরা অনেকের কাছেই বোঝা। এই সিদ্ধান্তে, বিশেষ করে হরিয়ানা, রাজস্থানের মত রাজ্যে বেড়ে যেতে পারে কন্যা ভ্রূণ হত্যা’।
এই প্রসঙ্গে মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘২১ বছরে বিয়ে মানে তার শিক্ষার হার বেশি হওয়ার কথা। আর্থিকভাবেও কিছুটা সঙ্গতি থাকবে, কারণ এখন ১৬, ১৭ বছর বয়সের মেয়েকেও ১৮ বলে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে, বিয়ের বয়স বেশি হলে কিছুটা সামাজিক, আর্থিক জোর বাড়বে তার। নিজের অধিকার সম্পর্কে একটা ধারণা জন্মাবে, কী তার পাওয়ার কথা, আর কী পাচ্ছে সেই সম্পর্কে বিচার করতে পারবে। মেয়েদের সামগ্রিকভাবে স্বনির্ভর করা, শিক্ষিত হওয়া অত্যন্ত জরুরি’।