মৌমিতা সাহা: উত্তর পূর্বাঞ্চলের আদিবাসী সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রিয় একটি খাবার হলো ‘শিদল শুটকি’। সেখানে পুটি মাছ কে একটি পাত্রের মধ্যে তেল এবং হলুদ দিয়ে মাখিয়ে পাত্রটির মুখ বন্ধ করে মাটির নিচে রেখে দেয় বেশ কয়েক মাস ধরে, তারপর প্রায় পাঁচ ছয় মাস পর মাটির নিচ থেকে সেই পাত্রের মধ্যে থাকা পুঁটিমাছ গুলিকে বের করে বিভিন্ন রকমের পদ তৈরি করে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।
তাদের মতে এই খাদ্য যেমন সুস্বাদু হয় তেমনি ম্যালেরিয়ার মতো মহামারী রোগ রুখে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এই পুটি মাছ!। শুধুমাত্র উত্তর-পূর্বাঞ্চল নয় এমনকি নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মেঘালয় ,ও মনিপুরেও অত্যন্ত বিখ্যাত এই ‘শিদল শুটকি’। উত্তর-পূর্বাঞ্চল রাজ্যের অধিকাংশ বাসিন্দাদের বিশ্বাস যে, তাদের এই শিদল শুটকি অর্থাৎ মাটির তলায় শুকিয়ে রান্না করা পুটি মাছ শুধুমাত্র ম্যালেরিয়া নয়, এমনকি বর্তমানের করোনা ভাইরাসের সংক্রমন’কেও হার মানিয়েছে।
আই সি এম আর এর তথ্য সূত্র অনুযায়ী, নাগাল্যান্ড ও মিজোরাম-এ এখনো পর্যন্ত যথাক্রমে 238 এবং 896 জন কোভিড আক্রান্ত হয়েছে, কিন্তু একজনের করোনা সংক্রমণে মৃত্যু হয়নি। তবে এই প্রসঙ্গে গুয়াহাটি মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল এর বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডক্টর কৈলাস ভট্টাচার্য্য বলেছেন, ” প্রায় দীর্ঘ সময় ধরেই উত্তর পূর্বাঞ্চলের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে এই পুঁটি মাছ মাটির তলায় রেখে তারপর শুকিয়ে রান্না করে খাওয়ার প্রচলন আছে। তাদের মতে এই খাদ্য সুস্বাদু এবং জীবানুনাশক সুপারিও তারা এই পদ্ধতিতে খেয়ে থাকে। ডা. কৈলাস বাবুর মতে, “দীর্ঘ সময় ধরে মাটির তলায় আবদ্ধ করে রাখার ফলে তাতে এক রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়, তবে তা ক্ষতটা উপকার বা ক্ষতি কারক তার এখনো কোনো বিজ্ঞানসম্মত যাচাই করা হয়নি”।
পাশাপাশি তিনি এও বলেছেন, জনবিশ্বাসকে বাস্তবের আতশ কাঁচে যাচাই করতে গেলে পরীক্ষার দরকার, যেটা এখনো হয়নি। তবে স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের মতে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্য গুলি অন্যান্য দেশের তুলনায় কম দূষিত, সেখানকার যানবাহন এবং আন্তর্জাতিক যানবাহন চলাচল অনেকটাই কম। ফলে দূষণ ও তুলনামূলক অনেক কম হয়। আরোও একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা যা হলো উত্তর- পূর্ব অঞ্চল গুলি পাহাড় সংলগ্ন হওয়ার দরুন, সেখানকার মানুষের ফুসফুসের কার্যক্ষমতা অনেকটাই বেশি, যা কোভিড মৃত্যুর হার কম হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হতে পারে।